
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোবিজ অঙ্গনের এক ঝাঁক শিল্পী-সেলিব্রেটির পোস্ট নিছকই শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর আড়ালে ছিল সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এ অভিযোগ তুলেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা-এর অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
রবিবার (১৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, একটি সমন্বিত প্রোপাগান্ডা মেশিনারি ব্যবহার করে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টরা’ ১৫ আগস্টকে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত তৈরির হাতিয়ার বানিয়েছে।
শোক নয়, ছিল পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন।
সায়ের লিখেছেন,“আপনি যদি খালি চোখে দেখেন তাহলে মনে হবে শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কিন্তু অন্তরালে এটি ছিল একটি ওয়েল-কো-অর্ডিনেটেড ক্যাম্পেইন। কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাভোগী, কেউ সরাসরি অর্থের বিনিময়ে, আবার কেউ তথাকথিত ‘সাংস্কৃতিক মাফিয়া’দের প্রভাবে।”
তার দাবি—গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা পাওয়া একশ্রেণির শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী সক্রিয়ভাবে এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেন।
গ্লোরিফিকেশনের কৌশল
সায়েরের মতে, মূল কৌশল ছিল বঙ্গবন্ধুকে একপাক্ষিকভাবে গৌরবান্বিত করা, অথচ এড়িয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দমন-পীড়ন, জুলাইয়ের গণহত্যা এবং ১৯৭২-৭৫ সময়কালের রক্ষীবাহিনীর ভয়াবহতা।
তিনি আরও লিখেছেন, “মুজিবের স্বৈরশাসন, দুর্ভিক্ষে লক্ষ মানুষের মৃত্যু, রক্ষীবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ—এসব কোনো আলোচনা নেই। অথচ শোকের পোস্টে একাত্তরের অবদানকে আলাদা করে গ্লোরিফাই করা হয়েছে। এটা ছিল সচেতনভাবে তৈরি করা একটি ন্যারেটিভ।”
ষড়যন্ত্রের নকশা
সায়ের দাবি করেন, ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রভাবশালী কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এক আওয়ামীপন্থি মিডিয়া কুশলী পুরো প্রচারণার নকশা তৈরি করেন।
প্রথম ধাপে দলীয় ঘনিষ্ঠ শিল্পীরা পোস্ট দেন, যেমন তারিন, তমালিকা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস ও শামীমা তুষ্টি। তাদের পোস্টের পর বাংলা সিনেমার এক শীর্ষ নায়কের পোস্টকে ‘সেন্ট্রাল ভ্যালিডেশন’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেই নায়ককে নানা উপায়ে ইনফ্লুয়েন্স করে এই পোস্টে বাধ্য করা হয়।
সাংস্কৃতিক মাফিয়া ও পত্রিকার সম্পৃক্ততা
সায়ের তার পোস্টে আরও লেখেন,“এই প্রোপাগান্ডায় ‘এফ-গ্রেড’ নায়ক যাহের আলভীকেও ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি ১৫ আগস্টের আগে ও পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে পোস্ট দিয়ে আলোচনায় আসেন। পরদিন একটি জাতীয় দৈনিক তাকে নিয়ে বড় ফিচার ছাপে। এটি আসলে তাকে পুরস্কৃত করার কৌশল।”
তিনি অভিযোগ করেন, এই দৈনিকটির বিনোদন প্রতিবেদক আওয়ামী ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্কের অংশ এবং এক শীর্ষ নায়কের ফেসবুক পেজের পিআর ম্যানেজার। একইভাবে বিজ্ঞাপন জগতের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও এ প্রচারণায় জড়িত বলে দাবি করেন সায়ের।
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা
জুলকারনাইন সায়ের বলেন, “এটি ছিল একটি সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার। কয়েক হাজার ভুয়া লাইক-কমেন্ট, শেয়ার দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। অনেকে স্পটলাইটের লোভে এমন পোস্ট দিয়েছেন।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, এখন আওয়ামী লীগ সরাসরি মাঠে নেই। তবে তাদের পরিকল্পনা হলো সেলিব্রেটিদের গ্লোরিফাই করে জনগণকে ধীরে ধীরে প্রোপাগান্ডার মধ্যে আনা। এটি মূলত জুলাই গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসনের প্রাথমিক পদক্ষেপ।”
বিরোধী রাজনীতির দুর্বলতা
নিজের পোস্টে সায়ের দুঃখ প্রকাশ করেন যে, বিএনপি, এনসিপি বা জামায়াতের সমর্থকেরা মূলত একে অপরকে আক্রমণ করায় ব্যস্ত, অথচ আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
“জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন, বিরোধীদলের দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা জুলাই মাসের গণহত্যা এখন এজেন্ডার বাইরে চলে গেছে,”—লিখেছেন তিনি।
জনতার প্রতি বিশেষ আহ্বান করে সায়ের তার লেখার শেষ অংশে বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চাওয়ার আগেই ক্ষমতায় ফিরে আসে তবে দেশ আবার রক্ষীবাহিনী স্টাইলে হত্যাযজ্ঞের মুখোমুখি হবে। তাই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
এভাবেই সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত অভিযোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও তার দাবিগুলো সরকারি বা স্বাধীন কোনো তদন্তে এখনো প্রমাণিত হয়নি, তবু এই পোস্ট ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক চলছে।




























