
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: মহান আল্লাহর সর্বশেষ বাণী ‘পবিত্র কোরআন’, মানবতার জন্য এক অফুরন্ত রহমত। যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে, শোনে, বুঝে এবং এর নির্দেশ মেনে জীবন পরিচালনা করে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। পবিত্র কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি মুমিনের জীবনের আলো, পথনির্দেশ ও প্রশান্তির উৎস।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ﴾
অর্থ: আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী সংবলিত কিতাব, যার আয়াতসমূহ পরস্পর মিল রাখে। এ কিতাব শুনে যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের দেহ কাঁপে, তারপর তাদের দেহ ও হৃদয় শান্ত হয় আল্লাহর স্মরণে। (সুরা আজ-জুমার: ২৩)
নিচে কোরআন তিলাওয়াতকারীর ১০টি বিশেষ মর্যাদা তুলে ধরা হলো,
১. আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ
যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও অন্যকে শেখায়, সে আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,
«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»
অর্থ: তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। (সহিহ বুখারি)
২. কোরআন তিলাওয়াতকারীর চরিত্র হয় সুবাসিত
রাসুলুল্লাহ ﷺ কোরআন পাঠকারীর উদাহরণ দিয়েছেন সুগন্ধি ফলের সঙ্গে।
«الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالأُتْرُجَّةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ»
অর্থ: যে মুমিন কোরআন তিলাওয়াত করে, সে সেই ফলের মতো যার ঘ্রাণও মিষ্টি, স্বাদও মিষ্টি। (বুখারি)
৩. কোরআনের জ্ঞান মর্যাদা বাড়ায়
কোরআনের জ্ঞান যার মধ্যে আছে, সে দুনিয়ায় সম্মানিত হয় এবং আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে।
উমর (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ»
অর্থ: আল্লাহ এই কিতাবের মাধ্যমে কিছু জাতিকে উন্নত করেন এবং কিছু জাতিকে অবনত করেন। (সহিহ মুসলিম)
৪. আসমান ও জমিনে সম্মান অর্জন
কোরআন পাঠকারীর নাম আল্লাহ আসমানে প্রচার করেন।
রাসুল ﷺ বলেন,
«الْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ»
অর্থ: কোরআন তোমার জন্য সাক্ষী হবে অথবা তোমার বিপক্ষে সাক্ষী দেবে। (সহিহ মুসলিম)
৫. গাফেলদের তালিকা থেকে মুক্তি
যে ব্যক্তি রাতে অন্তত একশ আয়াত তিলাওয়াত করে, সে আল্লাহর কাছে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয় না।
«مَنْ قَرَأَ مِائَةَ آيَةٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ»
অর্থ: যে একশ আয়াত পাঠ করবে, তাকে গাফেলদের মধ্যে গণনা করা হবে না। (সহিহ ইবনু খুযায়মাহ)
৬. কোরআন তিলাওয়াত পাপ মোচন করে
যেখানে কোরআনের আলোচনা হয়, সেখানে আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।
«مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ… إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ»
অর্থ: যে জাতি আল্লাহর ঘরে কোরআন পাঠে সমবেত হয়, তাদের উপর প্রশান্তি নেমে আসে এবং রহমত তাদের ঘিরে ফেলে। (সহিহ মুসলিম)
৭. ঈমানি আলো ও ফিতনা থেকে নিরাপত্তা
জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠকারী আল্লাহর বিশেষ সুরক্ষায় থাকে।
«مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ نُورٌ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ»
অর্থ: যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত নূর জ্বলতে থাকে। (সহিহুল জামে)
৮. কোরআনের ধারক জাহান্নাম থেকে মুক্ত
রাসুল ﷺ বলেন,
«إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ»
অর্থ: যার অন্তরে কোরআনের কিছুই নেই, সে যেন এক ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর। (তিরমিজি)
৯. ফেরেশতাদের মর্যাদা অর্জন
দক্ষ কোরআন পাঠকারী ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে, আর যিনি কষ্টসহকারে পাঠ করেন, তিনিও দ্বিগুণ সওয়াব পাবেন।
«الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ»
অর্থ: দক্ষ তিলাওয়াতকারী থাকবে সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে। (বুখারি)
১০. জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা
যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে ও মুখস্থ রাখে, তার জান্নাতে অবস্থান হবে পাঠ করা আয়াতের সংখ্যানুসারে।
«اقْرَأْ وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا»
অর্থ: তুমি কোরআন পাঠ করো এবং উপরে উঠতে থাকো; তোমার মর্যাদা হবে সেই আয়াতে যেখানে তোমার তিলাওয়াত শেষ হবে। (আবু দাউদ)
উপসংহার:
কোরআন তিলাওয়াত শুধু ইবাদত নয়, বরং এটি এক অনন্য শক্তি, যা হৃদয়কে প্রশান্ত করে, চরিত্রকে নির্মল করে এবং আল্লাহর নিকট মর্যাদা বাড়ায়। তাই প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য, কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা এবং এর আলো নিজের জীবন ও সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া।































