
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: ডাকসুর পর এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে চমক দেখাল ইসলামী ছাত্রশিবির। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরুর মাত্র এক বছরের মাথায় সংগঠনটির সমর্থিত প্রার্থীরা শীর্ষ পদসহ ২৫টির মধ্যে ২০ পদে জয় পেয়েছে।
শনিবার বিকেলে ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা যায়, সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)সহ শীর্ষ চার পদের তিনটিই গেছে শিবির সমর্থিতদের দখলে।
ভিপি পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আব্দুর রশীদ জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শিবির সমর্থিত আরিফুল্লাহ আদিব, যিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।
জিএস পদে ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন শিবিরের মাজহারুল ইসলাম। এজিএস (পুরুষ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান এবং নারী এজিএস হিসেবে জয়ী হয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। শিবির সমর্থিত অন্যান্য বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন—আবু উবায়দা উসামা (শিক্ষা সম্পাদক), সাফায়েত মীর (পরিবেশ সম্পাদক), জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি (সাহিত্য সম্পাদক), রায়হান উদ্দিন (সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক), রুহুল ইসলাম (নাট্য সম্পাদক), মাহাদী হাসান (সহ-ক্রীড়া সম্পাদক, ছাত্র), ফারহানা লুবনা (সহ-ক্রীড়া সম্পাদক, ছাত্রী), রাশেদুল ইমন (আইটি সম্পাদক), তৌহিদ ইসলাম ও নিগার সুলতানা (সমাজসেবা সম্পাদক), হুসনী মোবারক (স্বাস্থ্য সম্পাদক), তানভীর রহমান (পরিবহন সম্পাদক) প্রমুখ। এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য পদেও শিবির সমর্থিত একাধিক প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
শিবিরের বাইরে ভিপি জিতুসহ আরও চারজন জয় পেয়েছেন। তারা হলেন—সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ জিসান আহমেদ (স্বতন্ত্র), ক্রীড়া সম্পাদক মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র), সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবীব (বাগছাস) এবং কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতী।
অন্যদিকে, শুরু থেকেই প্রচারে সরব থাকা ছাত্রদল ও বামপন্থিরা ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে শেষ মুহূর্তে ভোট বর্জন করে। ফলে কোনো পদেই তারা জয়ী হতে পারেনি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—শিবির সমর্থিত ছয় নারী প্রার্থীই জয় পেয়েছেন। তারা হলেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা, ফারহানা আক্তার লুবনা, নিগার সুলতানা, নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান ও নুসরাত জাহান ইমা।
নাটকীয় ভোট গণনা
গত বৃহস্পতিবার ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। প্রথমে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত থাকলেও, কয়েকটি প্যানেলের আপত্তির মুখে শেষ মুহূর্তে ম্যানুয়াল গণনা করা হয়। এতে আট ঘণ্টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ফলাফল প্রকাশে সময় লেগেছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা।
ভোট গণনার সময় এক পোলিং অফিসারের মৃত্যুসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। তিনজন পর্যবেক্ষক ও একজন কমিশনার পদত্যাগও করেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও উপাচার্যের সিদ্ধান্তে ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবারের নির্বাচনে প্রায় ১২ হাজার ভোটারের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
হল সংসদের ফলাফল
বিভিন্ন হলে আলাদা ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। আল বেরুনী হলে ভিপি হয়েছেন রিফাত আহমেদ শাকিল, কামাল উদ্দিন হলে রায়হান কবীর, নজরুল ইসলাম হলে রাকিবুল ইসলাম, মীর মশাররফ হোসেন হলে খালেদ জুবায়ের, মওলানা ভাসানী হলে আবদুল হাই স্বপন, সালাম-বরকত হলে মারুফ হোসেন, ১০ নম্বর হলে আসিফ মিয়া, ২১ নম্বর হলে শিহাব প্রমুখ নির্বাচিত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিপি-জিএস পদে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
দীর্ঘ বিরতির পর জাকসু নির্বাচনে শিবিরের এ বিপুল জয়কে অনেকে ঐতিহাসিক বলছেন। নতুন নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।




























