
আওয়ার টাইমস নিউজ।
স্বাস্থ্য: ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশুদের শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর মধ্যে ৯৮ শতাংশের রক্তে সিসার মাত্রা নিরাপদসীমার প্রায় দ্বিগুণ। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানাচ্ছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা রয়েছে, যা বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের জন্য রক্তে সিসার কোনো মাত্রাই নিরাপদ নয়, কারণ এটি মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে স্থায়ী ক্ষতি করে।
সিসা মূলত খাবার, পানি, বাতাস, কসমেটিকস, রান্নার পাত্র, রঙ, ব্যাটারি শিল্প ও ঘরের ধুলাবালির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ঢাকার আশপাশে ছড়ানো ছোট-বড় ব্যাটারি কারখানা, সীসা ভিত্তিক রঙ ও প্রসাধনী, এমনকি ধূমপানের ধোঁয়াও এই দূষণের বড় উৎস। শিল্প এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসরত শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা অন্যান্য এলাকার তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিসা শরীরে প্রবেশ করলে এটি মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি, দাঁত ও হাড়ে জমা হয় এবং বছরের পর বছর স্থায়ী থাকে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা হ্রাস, আচরণগত সমস্যা, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তাল্পতা, কিডনি দুর্বলতা এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
আইসিডিডিআর,বির আগের জরিপে ২০০৯-২০১২ সালে দেখা গিয়েছিল, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ৮৭ শতাংশের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। এক যুগ পর এ মাত্রা না কমে বরং বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিসা দূষণ রোধে শিল্প-কারখানাকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা, বিপজ্জনক কারখানা আবাসিক এলাকা থেকে সরানো এবং জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, দূষিত এলাকা এড়িয়ে চলা এবং শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। খাদ্যে সিসা কমানোর সফল উদাহরণ হিসেবে হলুদের ভেজাল রোধে নেয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়, যেখানে ২০১৯ সালে ৪৭% নমুনায় সিসা পাওয়া যেত, ২০২১ সালে তা শূন্যে নেমে এসেছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, আইসিডিডিআর,বি, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা




























