
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: পার্বত্য চট্টগ্রামে বহির্গত সহায়তাসহ সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনায় ত্বরিত প্রতিক্রিয়ার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী স্থানীয়ভাবে আড়াইশটি নতুন ক্যাম্প স্থাপনের দাবি তুলেছে। তারা বলছে, শান্তিচুক্তির পর পর্যাপ্ত ক্যাম্প অপসারণ হওয়ায় সশস্ত্র গ্রুপগুলো নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় নিয়মিত অনুপ্রবেশ ও নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সেনা ও নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলো সম্প্রতি অর্থসংগ্রহ, অপহরণ এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছেন। গত এক বছরে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি ৩৫০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, এর মধ্যে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) একা প্রায় ১০৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। একই সময় থেকে সশস্ত্র দলে অন্তত ৩৩২টি অপহরণ ও প্রায় ৮৯টি হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সমাজের মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও।
বহিরাগত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউপিডিএফসহ কিছু গোষ্ঠী ভারতের মিজোরাম থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র পাচ্ছে। এই ঘাঁটি-ভিত্তিক সহায়তা তাদের আরও ছোবলদার করেছে এবং অস্থিরতা বাড়াচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য আরও ক্যাম্প স্থাপন অপরিহার্য, এটাই তাদের যুক্তি।
এক ব্রিগেডিয়ার জানালেন, “বর্তমান ক্যাম্প অবকাঠামো পাহাড়ের ভৌগোলিকতা সামলাতে অপ্রতুল। যদি আড়াইশটি অতিরিক্ত ক্যাম্প তৈরি করা যায়, তাহলে প্রতিটি রুট দ্রুত কভার করা সম্ভব হবে এবং অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে সহজ হবে।”
চাঁদাবাজি ও অপহরণে লক্ষ্যভিত্তিক ধারা সূত্র বলছে, চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে রাংগামাটিতে অনূর্ধ্ব ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়িতে ৮৬ কোটি ও বান্দরবান অঞ্চলে ২০ কোটি টাকার মতো আয়ের হিসাব পাওয়া গেছে। চাঁদার উৎস হিসেবে ব্যবসায়ী, কৃষক, যানবাহন ও কাঠ–বাঁশসহ বিভিন্ন প্রকৃতির শোচনা রয়েছে। অপহরণে পাহাড়ি নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের নামও রয়েছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা পুলিশের নজরে এসেছে।
সেনা ও বিশেষজ্ঞদের অবস্থান খাগড়াছড়ি জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, “কিছু জনের নয়, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীকেই ভেতরে টেনে নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দ্রুত ক্যাম্প বৃদ্ধিই হল কার্যকর সমাধান।” নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সীমান্তকেন্দ্রিক পদক্ষেপ ও স্থানীয় পর্যায়ে স্থায়ী বিরোধিদমন নীতি অনুসরণ করতে বলেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা সেনাবাহিনী বলছে, ক্যাম্প সম্প্রসারণ মূলত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদ্যবহ; তারা নিজেদের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে এবং বর্তমানে উপলব্ধ সম্পদ ও লোকবল দিয়ে তৎপরতার তদারকি চালাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষণ ও ভাবনা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, “পাহাড়ে ক্যাম্প বাড়ালে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সম্ভব হলেও সেটির সাথে নজরদারি, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আস্থা পুনর্গঠন এবং সীমান্ত পার্দর্শিতা বাড়ানোও জরুরি। অন্যথায় সমস্যা কেবল সাময়িকভাবে ঠেকবে।”
বৃহত্তর স্বার্থে সেনাবাহিনী আশা করছে, পর্যাপ্ত ক্যাম্প স্থাপন ও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার হলে পার্বত্যাঞ্চলে পুনরায় সহিংসতা কমে আসবে এবং সাধারণ মানুষের নিত্যজীবন স্বাভাবিক হবে।



























