
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: দাম্পত্য জীবন আল্লাহর এক অপূর্ব নিয়ামত। এটি শুধুমাত্র ভালোবাসা বা সামাজিক দায়িত্বের মাধ্যমে গড়ে ওঠে না; বরং এটি ধৈর্য, সদাচরণ, সম্মান, আত্মিক বন্ধন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্থায়ী ও সুখময় হয়। ইসলামী শিক্ষায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে গভীর ও মজবুত করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। নীচে এসব নির্দেশনার আলোকে সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ার আটটি মূল সুন্নাহ তুলে ধরা হলো।
১. আত্মিক সংযোগ বৃদ্ধি করা
বিয়ে কেবল সামাজিক চুক্তি নয়; এটি প্রেম, ভালোবাসা ও মানসিক প্রশান্তির গভীর সম্পর্ক।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
(সুরা রুম: ২১)
অর্থ: আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য নিজের মতো করে জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের প্রতি শান্তি লাভ করো এবং তাঁর মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।
আত্মিক বন্ধনকে দৃঢ় করা সুখী সংসারের মূল চাবিকাঠি।
২. গোপনীয়তা রক্ষা করা
নবীজি (সা.) বলেছেন:
أَقْبَحُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ فَضَحَ زَوْجَتَهُ
(সহীহ মুসলিম: ১৪৩৭)
অর্থ: কিয়ামতের দিনে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হলো সে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের পর তা প্রকাশ করে।
দাম্পত্যে গোপনীয়তা রক্ষা এবং একে অপরের দোষ ঢেকে রাখা বিশ্বস্ততার মূল ভিত্তি।
৩. ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
مَنْ عَفَا وَصَبَرَ وَرَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ زَادَهُ شَرَفًا
(সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮)
অর্থ: যে ব্যক্তি ক্ষমা ও ধৈর্য প্রদর্শন করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
ক্ষমাশীলতা ও ধৈর্য দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও স্থায়ী করে।
৪. একে অপরের সহযোগী হওয়া
নবীজি (সা.) পরিবারে দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَسْتَأْنِفُ أَعْمَالَ الْبَيْتِ بَعْدَ عَوْدِهِ إِلَى الْبَيْتِ
(সহীহ বুখারী: ৬৭৬)
অর্থ: নবীজি (সা.) বাইরে কাজ শেষ করে ফিরে আসার পরও ঘরের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতেন।
পরিবারের কাজ ভাগ করা কেবল দায়িত্ব নয়, এটি ভালোবাসার প্রকাশ।
৫. আনন্দ ভাগাভাগি করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতেন, ভ্রমণ করতেন ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। হাদিসে আছে:
سَابَقْتُ عَائِشَةَ فِي الْجَرْيِ
(আবু দাউদ: ২৫৭৮)
অর্থ: আমি আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছি।
স্ত্রীকে সময় দেওয়া এবং আনন্দ ভাগ করা দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
৬. প্রশংসা করতে শেখা
নবীজি (সা.) স্বীয় স্ত্রীদের প্রশংসা করতেন। হাদিসে আছে:
عَائِشَةُ أَفْضَلُ نِسَاءِ الْعَالَمِ
(সহীহ বুখারী: ৩৭৬৯)
অর্থ: আয়েশা (রা.) সব নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
প্রশংসা আত্মিক তৃপ্তি আনে এবং সম্পর্ককে গভীর করে।
৭. স্ত্রীকে কষ্ট না দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
لَا يَضْرِبُ أَحَدُكُمْ زَوْجَتَهُ كَفُرْغَالٍ وَهُوَ يَبِيتُ مَعَهَا
(সহীহ বুখারী: ৫২০৪)
অর্থ: কেউ যেন স্বীয় স্ত্রীকে আঘাত না করে, অথচ দিনের শেষে তার সঙ্গে শয্যা গ্রহণ করে।
সুন্নাহ অনুসারে স্ত্রীর প্রতি নম্রতা ও সম্মান অপরিহার্য।
৮. উত্তম আচরণে মনোযোগী হওয়া
নবীজি (সা.) বলেছেন:
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي
(তিরমিজি: ৩৮৯৫)
অর্থ: তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হলো যে তার স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে, আর আমি আমার স্ত্রীদের সঙ্গে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম আচরণ করি।
উত্তম আচরণ পরিবারের শান্তি ও বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
সুখী দাম্পত্য জীবন কেবল প্রেম নয়, বরং ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা, সহযোগিতা, উত্তম আচরণ ও আত্মিক বন্ধনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই আটটি সুন্নাহ বাস্তবায়ন করলে পরিবারে ভালোবাসা, শান্তি এবং কল্যাণ নিশ্চিত হয়।





























