
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: ফ্যাসিবাদ শাসনামলে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
শনিবার আমার দেশ -এর কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘জুলাই-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্যচিন্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘অনেকে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিজয়ের কথা বলছেন। বাস্তবে বিগত ১৬ বছরে দেশে যে ফ্যাসিবাদী বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত বিস্ফোরণই জুলাই বিপ্লব।’’
তিনি বলেন, ‘‘সে সময় নাটক, সাহিত্য, সিনেমা—সব মাধ্যমেই ইসলামকে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের নানা উপাদানকে স্বাভাবিকভাবে স্থান দেওয়া হয়েছে।’’
তিনি ক্ষুদিরাম প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘স্বদেশি আন্দোলনে ক্ষুদিরাম ছিল সাহিত্যের হিরো। তেমনই জুলাই বিপ্লব আমাদের আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আনাসের মতো হিরো দিয়েছে। এই হিরোদের সাহিত্যে ধারণ করতে হবে।’’
মাহমুদুর রহমান জানান, আমার দেশ এখন আর শুধু একটি সংবাদপত্র নয়, এটি একটি লড়াইয়ের হাতিয়ার। ‘‘২০০৮ থেকে আমরা বিদেশি সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে, দেশের গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকারের পক্ষে লড়াই করছি। মাঝখানে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবার শুরু করেছি, লড়াই চলবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের উপস্থিতি খুবই কম। আমরা যাদের সাহিত্য ভালোবাসি, রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, সমরেশ, মানিক, সেখানেও বাঙালি মুসলমানের চিত্র নেই। আমরা এমন সাহিত্য চাই, যেখানে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থাকবে।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ওয়াকিল আহমদ বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বল্প সময়ে অসংখ্য কবিতা, গান রচিত হয়েছে। এই সম্ভার নতুন সাহিত্য ধারার পথ খুলে দিয়েছে।’’
দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘‘মাহমুদুর রহমানের মাঝে তার মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের প্রতিচ্ছবি পাই। সাহিত্য-সংস্কৃতির সংকট কাটাতে লেখক-কবিদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’’
লেখক ও চিন্তক মুসা আল হাফিজ বলেন, ‘‘শুধু শেখ হাসিনাই স্বৈরাচার নন, মুনতাসির মামুনদের মতোরা সেটাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বৈধতা দিয়েছেন।’’
কবি ইমরুল হাসান বলেন, ‘‘বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি দখল করে নিলেই সাহিত্যের ন্যারেটিভ হয় না। আমাদের দৃষ্টি-ভিশন পরিষ্কার রাখতে হবে।’’
গল্পকার জহির হাসান বলেন, ‘‘ক্ষমতা আর সাহিত্য একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। যারা ক্ষমতায় থাকে, তারাই সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে ন্যারেটিভ গড়ে তোলে।’’
কবি সাখাওয়াত টিপু বলেন, ‘‘জুলাই বিপ্লবের আগে-পরে সাহিত্যের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট থাকা জরুরি। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর আমাদেরও সমস্যা। এই সমস্যা মিটলে দক্ষিণ এশিয়াও স্বস্তি পাবে।’’
কবি হাসান রোবায়েত বলেন, ‘‘জুলাই বিপ্লবের পরও সাহিত্যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। সাধারণ মানুষের ন্যারেটিভে এখনও সেই প্রভাব সেভাবে পৌঁছেনি।’’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আমার দেশ সাহিত্য সম্পাদক মুহিম মাহফুজ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নয়া দিগন্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, ড. ওয়াকিল আহমদ, কবি সাখাওয়াত টিপু, মুসা আল হাফিজ, ইমরুল হাসান, জহির হাসান, শাহীন রিজভী, শান্তা মারিয়া, হাসান রোবায়েত, ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহর প্রেসিডেন্ট মজুমদার মুহাম্মদ আমিনসহ অনেকে।




























