
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি বিমান হামলায় সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতি-সমর্থিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইয়েমেন-ইসরায়েল সংঘাত প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। এবার পাল্টা প্রতিক্রিয়া আগের তুলনায় বেশি সুসংগঠিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। হুতিরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আক্রমণাত্মক ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েলের গভীরে হামলা চালাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতের মূল প্রেক্ষাপট গাজাকে কেন্দ্র করে। ইয়েমেন বারবার জানিয়েছে, তারা গাজার প্রতি সমর্থন থেকে পিছু হটবে না। হুতি ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ আদেল রাজেহ জানিয়েছেন, দেশটি নতুন সামরিক কৌশল গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্লাস্টার টাইপের ‘প্যালেস্টাইন-২’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সমুদ্রপথে অভিযান। তিনি সতর্ক করেছেন, আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের হামলা হতে পারে, যা ইসরায়েলের ভেতর বা রেড সি এলাকায় ঘটতে পারে।
ইসরায়েলও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে পাঠানো একটি ড্রোন ইসরায়েলের নেগেভ অঞ্চলের রামোন বিমানবন্দরে বিস্ফোরিত হয়ে যাত্রী টার্মিনালে ক্ষয়ক্ষতি করেছে। সাধারণত এই ধরনের ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপাতিত করে, তবে এবার আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে।
কিছু আঞ্চলিক গবেষক মনে করছেন, বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনা সীমিত। বিশ্লেষক কামাল জাগলুল বলেছেন, হুতিদের পাল্টা আক্রমণ হবে, তবে সীমিত পর্যায়ে। ইয়েমেন বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে চাইবে না, যাতে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জোট গড়ে তুলতে না পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অন্যদিকে, ইরাকের বিশ্লেষক আহমেদ আল-ইয়াসিরি মনে করেন, হুতিদের সফল হামলা ইসরায়েলকে সরাসরি ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করতে প্ররোচিত করতে পারে। এতে নতুন ফ্রন্ট সক্রিয় হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে। তবে সংঘাত দ্রুত নতুন রাষ্ট্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম।
হুতিদের মূল উদ্বেগ শুধু ইসরায়েল নয়, দেশটির ভেতরে আঞ্চলিক সমর্থনপুষ্ট বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে ওঠা। জর্ডানের লেখক হাজেম আয়াদ সতর্ক করেছেন, এই অভ্যন্তরীণ চাপ বিস্তৃত সংঘাতের স্ফুলিঙ্গ জ্বালাতে পারে।
ইয়েমেন-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মোড় নিয়েছে। একদিকে হুতিরা গাজাকে ঘিরে সামরিক অবস্থান আরও দৃঢ় করছে, অন্যদিকে ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে চাইছে। তবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উভয়পক্ষই সীমিত পরিসরে শক্তি প্রদর্শনের পথ বেছে নেবে। রেড সি ও মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: শাফাক নিউজ, আল জাজিরা




























