আওয়ার টাইমস নিউজ
ইসলামী ডেস্ক: ইসলাম আগমনের আগে আরব সমাজে স্ত্রীদের প্রতি মানুষের আচরণ অত্যন্ত নিকৃষ্ট ছিল। তাদেরকে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা ও সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হতো। অগণিতবার তালাক দেওয়া হলেও তাঁদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করা হতো না এবং তারা সাধারণ মানুষের সমান মর্যাদা পেতো না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অসামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।
(আবু দাউদ: ২১৪২; মুসনাদে আহমাদ: ১৮৫০১)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তোমরা তাদের অপছন্দও করো, আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ করে দেবেন।
(সূরা নিসা: ১৯)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি হজের বিদায়ের ভাষণে বলেন:
اتقوا الله في النساء، فإنكم أخذتموهن بأمانة الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله، ولهن عليكم حق…
নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের দায়িত্ব হলো তাদের উত্তমভাবে রিজিক ও ভরণপোষণ দেওয়া, এবং তাদের প্রতি সহনশীল ও সম্মানজনক আচরণ করা।
(মুসলিম: ১২১৮)
স্ত্রীর মৌলিক অধিকার
ইসলামী শরিয়তে স্বামীদের ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো:
১. পূর্ণ মোহারানা প্রদান করা।
২. প্রয়োজনমাফিক খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
৩. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ ও সৌজন্য বজায় রাখা।
৪. মাঝে মাঝে মাহরাম আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া।
৫. স্ত্রীর জন্য প্রয়োজনমাফিক ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা।
৬. ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা।
৭. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা।
(সূরা নিসা: ১৯; আল-কাবায়ের, ইমাম জাহাবি, পৃষ্ঠা: ১৭৫)
স্ত্রীর মন প্রফুল্ল রাখা
স্ত্রীর মানসিক ও আবেগিক শান্তি বজায় রাখা স্বামীর দায়িত্ব। বৈধতার সীমারেখায় স্ত্রীর আনন্দ ও প্রফুল্লতা নিশ্চিত করা ইসলামের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
للمسلم أن يلعب بسهمه، وركوبه على حصانه، ولعبه مع امرأته بالمعروف
মুসলমানের জন্য সব খেল-তামাশা নিষিদ্ধ নয়, তবে তার ধনুক থেকে তীর চালনা, ঘোড়া চালনা, এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরস্পরের রসিকতা ন্যায়সংগত।
(তিরমিজি: ১৬৩৭)
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, একবার হাবশি ছেলেরা মসজিদের কাছে খেলা করছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আড়াল থেকে তাকে দেখে শিখলেন, কতটুকু ধৈর্য ও সময় দিতে হয়, যাতে আনন্দ পূর্ণ হয়।
(বুখারি: ৫২৩৬)
দীর্ঘস্থায়ী পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহনশীলতা
দাম্পত্য জীবনে ছোটখাটো ঝগড়া বা মনোমালিন্য স্বাভাবিক। স্বামীর কর্তব্য হলো স্ত্রীর ত্রুটি বা অসদাচরণে ধৈর্য রাখা এবং তাদের প্রতি সদয় ও ক্ষমাশীল মনোভাব প্রদর্শন করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"استوصوا بالنساء خيرًا، فإن المرأة خُلِقَت من ضلع"
নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করো। নারী জাতি পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি। ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা, যদি জোর করলে ভেঙে যাবে, আর ছেড়ে দিলে সবসময় বাঁকাই থাকবে; তাই সদাচরণ করো।”
(বুখারি: ৫১৮৬)
দায়িত্ব ও হিসাব
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা এবং দায়িত্বের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন:
"كلكم راعٍ وكلكم مسؤول عن رعيته"
স্মরণ রেখো, প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে; রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রজাদের হকের ব্যাপারে, এবং পুরুষ তার পরিবার ও স্ত্রীদের বিষয়ে।
(বুখারি: ৮৯৩)
ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে। স্ত্রীদের সম্মান, অধিকার ও মনোবল রক্ষা করা স্বামীর দায়িত্ব। শুধুমাত্র এটি পালন করলেই পরিবারে শান্তি, সুশৃঙ্খলতা ও সমৃদ্ধি আসে।