আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা কনকনে হিম তোলা শুরু করেছে। রাত নামলেই কাঁপছে শহর-গ্রাম, ঘরে থাকা মানুষের অস্বস্তি চোখে পড়ে, কিন্তু এর চেয়েও বেশি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে পথশিশু, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও অসহায় মানুষ। শীতের তীব্রতা শুধু শারীরিক নয়, তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে ক্ষুধা, অসুস্থতা ও মৃত্যুভয়ের সাথেও।
শীতে পথশিশুদের জীবনযুদ্ধ:
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সব বড় শহরের ফুটপাতে সন্ধ্যা নামার পর দেখা যায় ছোট ছোট শিশুদের। কারও গায়ে ছেঁড়া জামা, কারও কেবল পাতলা শার্ট। বয়স পাঁচ-ছয় হলেও শীতনিবারণ কম্বল তাদের ভাগ্যে জোটে না।
শীতের রাতে পথশিশুরা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না; কেউ কেউ দল বেঁধে শরীর ঘেঁষে শুয়ে উষ্ণতার চেষ্টা করে।
পলিথিন, কাগজ বা পুরনো বস্তা জড়িয়ে তারা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে চায়। নবজাতক ও ছোট শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো অসুখগুলো তাদের জন্য মারাত্মক।
অসহায় বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষ:
শুধু শিশুরাই নয়, অসংখ্য বৃদ্ধও শীতের রাতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ ভিক্ষা করছেন, কেউ দিনমজুরি করছেন। রাত হলে ফুটপাত বা দোকানের বারান্দায় রাত কাটাচ্ছেন। বৃদ্ধ বয়সে শীত সহ্য করার ক্ষমতা কম, গরম কাপড় ও চিকিৎসার অভাব জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা:
শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও শীতের তীব্রতা ভয়াবহ। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষরা শীতের প্রকোপে বেশি ভোগেন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে কৃষক ও শ্রমজীবী মাঠে নামেন, পাতলা কাপড় পরে কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। অনেক পরিবারে একটি মাত্র কম্বল, তা দিয়ে বাবা-মা ও শিশুরা পালাক্রমে শরীর ঢাকেন।
সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয়:
প্রতিবার শীতে কম্বল বিতরণ করা হয়, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু হাজার হাজার পথশিশু ও অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছায় সীমিত। অনেক সময় কম্বল বিতরণ ছবি বা প্রচারের জন্য হয়, প্রকৃত সমস্যাগুলো অগোচরে থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শীতকালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সমন্বিত পরিকল্পনা:
শীতপ্রবণ এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন
পথশিশু ও অসহায়দের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা
স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বিত সহায়তা
সমাজভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম
শীত শুধু প্রকৃতির পরীক্ষা নয়, মানবতারও পরীক্ষা। আমাদের উষ্ণ ঘরের আরাম তখনই অর্থবহ, যখন ফুটপাতে কাঁপতে থাকা শিশুটিও একটু উষ্ণতা পায়। একটি কম্বল, একটি গরম কাপড় বা সামান্য সহানুভূতি, এই ছোট উদ্যোগ জীবন বাঁচাতে পারে। এই শীতে প্রশ্ন একটাই, আমরা কি শুধু দর্শক থাকব, নাকি মানুষের পাশে দাঁড়াব?