
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: মৃত্যু মানুষের জীবনের একটি অপ্রত্যাহার্য সত্য। জন্মের মুহূর্তে যেমন প্রতিটি প্রাণীর জন্য মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনই মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তই সাওয়াব ও নেক আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَسَنَبْلُوَنَّكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কষ্ট ও সুসংবাদ দ্বারা; তারপর তোমরা আমাদের দিকে ফেরানো হবে।” (সুরা আল-ইমরান : ১৮৫)
অর্থাৎ ধনী-গরিব, প্রজা-রাজা, শক্তিশালী-দুর্বল—সকলেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে বাধ্য। এই পৃথিবী সাময়িক এবং প্রতিটি মুহূর্তই অস্থায়ী। কিন্তু মৃত্যুর পরে যে কিছু আমল স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী হয়, তা হলো তিনটি বিশেষ আমল। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
إِذَا مَاتَ الْابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“যখন একজন মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটির ব্যতীত: চলমান দান, এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়, এবং নেক সন্তান যিনি তার জন্য দোয়া করে।” (সহিহ মুসলিম : ৪০৭৭)
১. সদকায়ে জারিয়া (চলমান দান)
সদকায়ে জারিয়া হলো এমন দান, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও চলতে থাকে। এটি হতে পারে:
মসজিদ নির্মাণ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন
স্বাস্থ্যসেবা বা খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম
বৃক্ষ রোপণ এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ সেই বীজের মতো যা সাতটি কাঁটার মধ্যে জন্মায়, প্রতিটি কাঁটার মধ্যে একশ বীজ থাকে; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দেন তা বহুগুণ বৃদ্ধি করেন।” (সুরা আল-বাকারাহ : ২৬১)
হাদিসেও উল্লেখ আছে যে নবীজি (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, এমনকি একটি টুকরা ইটের জন্যও আল্লাহ তার জন্য হাজারেক গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেন।”
২. জ্ঞান যা মানুষকে উপকৃত করে
জ্ঞান ও শিক্ষা এমন এক সম্পদ যা মৃত্যুর পরও সাওয়াবের ধারাকে অব্যাহত রাখে। এটি হতে পারে:
ধর্মীয় বা শাস্ত্রীয় বই লেখা
মানুষকে ইসলামের পথে পরিচালিত করা
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
“যে ব্যক্তি কোনো কল্যাণের পথে দিকনির্দেশনা দেয়, তারও সেই আমলের সমান সওয়াব রয়েছে।” (সহিহ মুসলিম)
এতে বোঝা যায়, যে শিক্ষা বা জ্ঞান মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসে, তার সওয়াব অব্যাহত থাকে যতদিন মানুষ তা থেকে উপকৃত হয়।
৩. নেক সন্তান এবং তার দোয়া
নেক সন্তান এমন একটি ধন যা মৃত্যুর পরও পিতামাতার জন্য দোয়া করে। এটি একটি মহান আমল যা কিয়ামতের দিনও সওয়াব হিসেবে ধরা হয়। হাদিসে এসেছে:
وَالصَّالِحُ مِنْ وَلَدِهِ يَدْعُو لَهُ وَيَسْتَمِرُّ صَلَاتُهُ وَصَدَقَتُهُ وَعِلْمُهُ
“নেক সন্তান তার পিতামাতার জন্য দোয়া করে, এবং তার দোয়া, সদকাহ ও জ্ঞানের বরকত পিতার আমলনামায় যোগ হয়।” (মুসলিম : ৪০৭৭)
এটি স্পষ্ট করে যে, সন্তান যদি তাদের পিতামাতার জন্য নিয়মিত দোয়া ও নেক কাজ করে, তবে তাদের আমল মৃত্যুর পরও চলতে থাকে।
মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, কিন্তু তিনটি আমল সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও নেক সন্তান মৃত্যুর পরও মুসলিমের সওয়াব জারি রাখে। ইসলামিক স্কলাররা মৃত্যুর আগে এই তিনটি আমলের গুরুত্বের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলেন। আল্লাহর পথে এসব আমল স্থায়ী বরকত এনে দেয় এবং কিয়ামতের দিন সবচেয়ে মূল্যবান হিসেবে গণ্য হয়।
মুমিনদের প্রতি নবীজি (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি নিজের জীবনকালেও অন্যকে উপকৃত করে, তার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে।”
অতএব, প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই তিনটি ক্ষেত্রেই সচেষ্ট হওয়া, যাতে মৃত্যুর পরে তার আমলনামা সমৃদ্ধ ও স্থায়ী হয়।


























