আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বাসের প্রতীক পবিত্র কোরআনকে হাতিয়ার বানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোটি টাকার প্রতারণা চালাত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চাকরির প্রলোভন ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের আশ্বাস দেখিয়ে গত কয়েক মাসে তারা অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলেছে। অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অভিযানে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৭০ লাখ টাকা ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, প্রতারকরা মূলত সরকারি ও ব্যাংক থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের টার্গেট করত। নিজেদের বড় ব্যবসায়ী ও বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছে নিয়ে যেত একটি সাজানো বাসায়। সেখানে ঘড়ি আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। এমনকি নাটকীয়ভাবে ভারতীয় ক্রেতা সেজে তিন কোটি টাকার চেকও দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত।
চক্রের এক নারী সদস্য ভাড়াটিয়া কিংবা বোন পরিচয়ে প্রতারণার প্রক্রিয়াকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলত। কখনো আবার কাজের মেয়ে সেজে ভুক্তভোগীর আস্থা অর্জন করত। এক পর্যায়ে ব্যবসায়িক অংশীদারির নামে নাটকীয় ‘ভাই ভাই’ পার্টনারশিপ অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীদের কোরআন ছুঁয়ে শপথ করানো হতো।
একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান একটি জাতীয় দৈনিকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে চক্রটির ফাঁদে পড়েন। কলাবাগানের একটি বাসায় নিয়ে তাকে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয় এবং কোরআন হাতে শপথ করিয়ে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারণার পর বাসা খালি করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান থানায় মামলা করেন।
মামলার সূত্র ধরে পিবিআই অভিযান চালায় এবং গ্রেপ্তার করে মাহবুবুর রহমান ওরফে আশরাফুল ইসলাম বাবু (৪৩), আল-আমিন ওরফে আ ন ম রফিকুল ইসলাম (৫৫), রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাকিব (৪৯), মো. মাসুদ খান ওরফে বস মাসুদ (৪৩) এবং বিলকিসকে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, অভিযানের সময় আরও এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াস খানকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা হয় এবং তার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জব্দ তালিকায় নগদ টাকা ছাড়াও রয়েছে ৬টি দামি ঘড়ি (রাডো, রোলেক্স ও ওমেগা ব্র্যান্ডের), ২টি চেকবই, একটি সিল, একটি চুক্তিপত্র ও ১২টি মোবাইল ফোন। তদন্তে জানা গেছে, গত তিন মাসে চক্রটি ৫০টির বেশি মোবাইল ফোন ও শতাধিক সিম ব্যবহার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে।