
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকীয় কলামঃ হুসাইন আল আজাদ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সামরিক অভিযান প্রতিনিয়ত বিস্তৃত আকার ধারণ করছে। এক মাসের মধ্যে অন্তত ছয়টি আরব দেশে চালানো হামলা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে শুরু করে সম্প্রতি দোহা পর্যন্ত ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিয়মিত বিমান ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। মানবিক সহায়তার জাহাজ পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া এই আগ্রাসন মানবতার প্রতি সবচেয়ে বড় অবমাননার পরিচায়ক।
এই হত্যাযজ্ঞের সময়, ক্ষমতালোভী ও নির্লজ্জ মুসলিম বিশ্ব নেতারা কেবল নিরবতার পরিচয় দিচ্ছেন। মৌনতা এবং অচল থাকা তাদের একমাত্র “কৌশল”। তারা ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও দোহার মতো অঞ্চল থেকে আসা সংবাদের প্রতি চোখ বন্ধ করে রেখেছেন, এবং নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতা রক্ষার জন্য মানবতার নৈতিকতা উপেক্ষা করছেন। তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা মুসলিম জাতির মর্যাদা, আন্তর্জাতিক ন্যায় এবং মানবিক নীতির প্রতি এক বিশাল অবমাননা।
দোহায় হামাসের আলোচক দলকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক হামলা আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার ও আঞ্চলিক শান্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। কাতার সরকার যেমন তা কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছে, তেমনি মুসলিম বিশ্বের সাহসী ও ন্যায়পরায়ণ নেতৃত্বের অভাবের ফলে এই ধরণের আগ্রাসন বারবার ঘটছে।
এখন সময় এসেছে মুসলিম নেতাদের জন্য, যারা ক্ষমতার লোভে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে নিরবতা বেছে নিয়েছেন, তাদের কঠোর সমালোচনা করার। কোরআন ও হাদিস আমাদের স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রত্যেক মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“যারা অন্যায়কে দেখে অথচ তা প্রতিহত করে না, তারা বিশ্বাসীদের অন্তর্গত নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৭১৪৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যদি একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে অন্যায় করতে দেখে এবং তাকে রোধ না করে, তাহলে আল্লাহর কাছে তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৯৯৯)
অতএব ক্ষমতার লোভী মুসলিম নেতারা যারা মানবতা ও মুসলিম জাতির জন্য মৌনতার পরিচয় দিচ্ছেন, তাদের এই আচরণ ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী। এই নেতারা এখনই তাদের নৈতিক দায়িত্ব বুঝতে বাধ্য। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও দোহার নিরীহ মানুষদের রক্ষা করা মুসলিম বিশ্বের প্রতি তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী, ন্যায়পরায়ণ এবং মানবিক নীতি অনুসরণকারী নেতৃত্ব এখন অপরিহার্য। ক্ষমতার লোভ আর স্বার্থপর নিরবতা ইসলামিক নৈতিকতা ও মুসলিম মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এখন সময় মৌনতার নয়, সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে দাঁড়ানোর। ক্ষমতালোভী মুসলিম নেতাদের কেবল নিন্দার নয়, তাদের সতর্ক করার ও দায়িত্বে দাঁড় করানোর সময় এসেছে। আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণদের সাথেই আছেন।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, মিডল ইস্ট আই, তুর্কি আনাদোলু এজেন্সি।




























