
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযান ও ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রাখার কারণে যে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের অবসান দাবি করেছেন।
ইসরাইলি আগ্রাসন ও মানবিক বিপর্যয়
গাজা সিটিকে দখলের উদ্দেশ্যে ইসরাইল কেবল বোমা হামলাই নয়, চিকিৎসাকর্মীদের বহিষ্কারেরও নির্দেশ দিয়েছে। এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করে বলছে, এ অভিযান শহর থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
জাতিসংঘ উত্তর গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন এখন হুমকির মুখে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৬২ হাজার ৬২২ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন এক লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৩ জন। শুধু গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও ত্রাণপ্রার্থীও ছিলেন।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ
জাতিসংঘের ঘোষণার পরই ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সিডনি, ব্রিসবেন ও মেলবোর্নজুড়ে অন্তত ৪০টি ফিলিস্তিনিপন্থি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু ব্রিসবেনেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। আয়োজক সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে মোট প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
অস্ট্রেলিয়ার মধ্য-বাম সরকার সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশটির সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ককে টানাপোড়েনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর মধ্যেই বিশাল সমাবেশ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পথে বাধা
একই সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেল ১৩-এর অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান হা’মেকার-এ প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, প্রায় দুই বছরের অভিযানে অন্তত সাতবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি আটকে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। রক্ষণশীল মন্ত্রীদের চাপও এর পেছনে প্রভাব ফেলেছে বলে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আহ্বান
গাজার শিশুদের পক্ষে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি এমিনে এরদোয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ইউক্রেনের শিশুদের জন্য যেমন তিনি কণ্ঠ তুলেছেন, তেমনি গাজার দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের জন্যও তার পদক্ষেপ প্রয়োজন। এমিনে এরদোয়ান লিখেছেন, “গাজা এখন শিশুদের কবরস্থান। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে।”
জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমানে গাজা সিটিতে পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৩২ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, যারা মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। একদিকে ইসরাইলের লাগাতার আগ্রাসন ও অবরোধ, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী শান্তির আহ্বান— দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের মাঝখানে দিন দিন আরও অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন গাজার সাধারণ মানুষ।




























