আওয়ার টাইমস নিউজ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ডেস্ক: বন্দরনগরী চট্টগ্রামজুড়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। সকাল থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির টহলে শহরজুড়ে আতঙ্ক আর নীরবতা। রাস্তাঘাট ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ, মানুষ ঘরেই বন্দি।
ঠিক দুপুর ১টা ৪০ মিনিট। হঠাৎ কাজির দেউড়ি মোড়ে জাতীয় পতাকা হাতে কিছু তরুণ-তরুণী চিৎকার করে ওঠে: “পালাইছে! খুনি হাসিনা পালাইছে!” মুহূর্তেই সেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। গুজব নয়, সত্য খবর যে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন, তা নিশ্চিত হতেই চট্টগ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের উল্লাস।
সেই মুহূর্তে অনেকেই সিজদায় পড়ে যান, কেউ কোলাকুলি করেন, আবার কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। যেন ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে বন্দরনগরীর প্রতিটি অলিতে-গলিতে।
রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন বললেন, “ভাই, কত মার খাইছি, গালি খাইছি পুলিশের। আজ মনে হইতেছে সত্যি সত্যি স্বাধীন হইলাম।”
খুলশীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বললেন, “স্বাধীনতার নামে যে মাইয়া দেশটারে বন্দি বানাইছিল, তার পতন দেখে মরলেও আফসোস নাই।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান জানালেন, দুপুরে শহরে ঢোকার পর খবর পেয়ে সবাই কান্না ও চিৎকারে ফেটে পড়ে। “এই দিনটা আমরা শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, হৃদয়ে লিপিবদ্ধ রাখব,” বলেন তিনি।
সেই দিন নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শহরের বিভিন্ন মোড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন। দুপুরে খবর শোনার পর তিনি বলেন, “পাশে থাকা এক তরুণ কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল আমাকে। এই কান্না আর এই মুহূর্ত, আমি কোনোদিন ভুলব না।”
শিবির নেতা তানজীর হোসেন জুয়েল বলেন, “সকাল থেকে আমরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছিলাম প্রস্তুত। যখন খবর এলো শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছে, তখন কেউ চিৎকার করছিল, কেউ পতাকা আনছিল, কেউ হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু একজন শাসকের দেশত্যাগ ছিল না। এটা ছিল বুকের ভেতরে জমে থাকা ১৫ বছরের কষ্টের বিস্ফোরণ।”
৫ আগস্টের সেই দুপুরটি শুধু একটি সরকারের পতন নয়, ছিল একটি জাতির মুক্তির নিঃশ্বাস। চট্টগ্রামের প্রতিটি রাস্তায়, মানুষের চোখে, অশ্রু আর উল্লাসে লেখা হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস।