আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: প্রকৃতির অদ্ভুত ও ভয়ংকর দৃশ্য মানুষকে বিস্মিত ও হতবাক করতে পারে। সম্প্রতি পাহাড় থেকে নেমে আসা লাল স্রোত এবং সমুদ্রের জল রক্তিম হয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা কি কোনো অশুভ সংকেত, নাকি এটি আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, এটি বোঝার জন্য ফিরে যেতে হবে কোরআন ও সহিহ হাদিসের শিক্ষার দিকে।
আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন
পবিত্র কোরআন প্রকৃতির বিস্ময়কর দৃশ্যকে আল্লাহর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে—
﴿إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
(সূরা আলে ইমরান: ১৯০)
অর্থ: “নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
এ থেকে বোঝা যায়, প্রকৃতির অস্বাভাবিক বা ভয়ংকর দৃশ্যও আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের প্রতিফলন।
প্রকৃতির নিয়ম ও কায়েমি সত্য
কোরআন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে—
﴿فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا﴾
(সূরা ফাতির: ৪৩)
অর্থ: “তুমি আল্লাহর নিয়মে কখনো কোনো পরিবর্তন পাবে না।”
পাহাড়ি এলাকায় লৌহসমৃদ্ধ মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে লাল স্রোত সৃষ্টি করা বা সমুদ্রের জল রঙ পরিবর্তন, এগুলো আল্লাহর প্রাকৃতিক নিয়মের অংশ। ইসলামের দৃষ্টিতে একে অলৌকিক বা অশুভ বলা যায় না।
ভয়ংকর ঘটনা মানেই অশুভ নয়
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
«إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ، لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ»
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অর্থ: “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এগুলো গ্রাস হয় না।”
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, প্রাকৃতিক কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেই সেটিকে অশুভ সংকেত বলা ইসলামের শিক্ষা নয়।
মুমিনের করণীয়
ইসলাম আমাদের নির্দেশ দেয়—
আল্লাহর শক্তি স্মরণ করা
নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করা
তাওবা ও আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগী হওয়া
কোরআন বলছে—
﴿وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا﴾
(সূরা আল-ইসরা: ৫৯)
অর্থ: “আমি নিদর্শন পাঠাই শুধু মানুষকে সতর্ক করার জন্য।”
সতর্কতার মানে আতঙ্ক নয়, বরং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান।
ইসলামিক শিক্ষা ও উপলব্ধি
প্রকৃতির অস্বাভাবিক দৃশ্য, যেমন পাহাড় থেকে নেমে আসা লাল স্রোত বা সমুদ্রের রক্তিম জল, আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ সীমিত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। এই ঘটনার প্রতি মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত:
ভয় বা আতঙ্ক নয়, আল্লাহর কুদরত এবং তাঁর নিয়মকে উপলব্ধি করা
নিজের নেক আমল, তাওবা ও আত্মশুদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা (তাওয়াক্কুল) বজায় রাখা
এই শিক্ষা অনুসরণ করলে মুমিন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ও শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হয়।