আওয়ার টাইমস নিউজ।
ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লবের র'ক্তা'ক্ত ইতিহাস!
ভালোবাসা, স্বপ্ন আর ছোট্ট সংসার, সবই ছিল একেবারে নতুন। ২০২৩ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ওমর ও ফারজানা। ফারজানা অনার্সে পড়ছেন, আর ওমর বাংলাদেশ এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টারে (বিএটিসি) ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। গত বছর ১৪ আগস্ট ছিল তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু কী এক অজানা তাড়না থেকে ১০ দিন আগেই, ৩ আগস্ট রাতে পরিবারকে নিয়ে ঘর সাজিয়ে বেলুনে, আলোকছটায় কেক কেটেছিলেন দুজন। কে জানত সেটাই হবে জীবনের প্রথম আর শেষ এনিভার্সারি!
ওমর থাকতেন উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের এক মেসে, স্ত্রী থাকতেন বাসাবোতে বাবা-মায়ের সঙ্গে। ছাত্র ধরপাকড়ের ভয়ে মেস বন্ধ হয়ে গেলে ওমর গ্রামে না গিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই আশ্রয় নেন। ২৩ জুলাই উত্তরা আবদুল্লাহপুরে এক বন্ধু রিফাতকে আটক করলে তাকেও ধরে পুলিশ। বিএটিসির আইডি দেখিয়ে কোনোভাবে ছাড়া পেলেও দিতে হয়েছিল টিউশনের টাকা।
৫ আগস্ট সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন বন্ধুর কাগজপত্র হাতে, থানা থেকে তাকে ছাড়াতে। কিন্তু সেখানেই উত্তরা জসিমউদ্দিন রোডে মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তরুণ ওমর।
মৃত্যুর আগের রাতে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলেন প্রিয় খাবার খাওয়াতে। আইসক্রিম কিনে বাসায় ফিরেছিলেন, ভেবেছিলেন একসাথে খাবেন। সকালে বের হওয়ার সময় স্ত্রী বারবার বলেছিলেন, খেয়ে যেতে, ওমর হেসে বলেছিলেন, ‘বিকেলে একসাথে খাবো’। সেই আইসক্রিম এখনো ফ্রিজে আছে, শুধু ওমর আর নেই!
যে তরুণ স্বপ্ন দেখেছিলেন আকাশ ছোঁয়ার, তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো সবার সামনে। সেই খুনের বিচার হবে তো? সেই অল্প বয়সী স্ত্রী, যিনি এক বছর না হতেই বিধবা হলেন — তার খবর কে রাখবে? যারা রক্তাক্ত দেহ ঠেলাগাড়িতে, রিকশায় হাসপাতালে পৌঁছে দিল — তাদের ভাগ্যে কি কোনো বদল আছে?
সব প্রশ্নের উত্তর অজানা। রাজপথে শুধু রক্তের দাগই জমা হচ্ছে।