আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বুধবার রাতে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি জামিন প্রক্রিয়া, বিচারিক স্বাধীনতা এবং উচ্চ আদালতের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে গত বছর র্যাব গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। এ ঘটনাকে ঘিরে জামিনের ন্যায্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ড. আসিফ নজরুল স্পষ্ট করেন, হাইকোর্ট একটি স্বাধীন বিচারিক প্রতিষ্ঠান এবং এর ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে ফয়সালের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
তিনি বলেন, ফয়সাল করিম মাসুদ অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়েছিলেন, যা সাধারণত সহজে হওয়ার কথা নয়। এমন জামিন তখনই সম্ভব হয়, যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা আসামির পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয়সম্পন্ন কিছু আইনজীবীর প্রভাবে এসব মামলায় জামিন পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়।
উচ্চ আদালতের কিছু জামিন আদেশে বিচারিক বিবেচনার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একটি হাইকোর্ট বেঞ্চে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় শত শত মামলায় জামিন দেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সে সময় এসব প্রশ্ন তোলার কারণে তার পদত্যাগ দাবিও উঠেছিল।
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, জামিন আইনগত অধিকার হলেও যেসব মামলায় অপরাধের প্রমাণ স্পষ্ট, আসামি পরিচিত সন্ত্রাসী এবং জামিন পেলে পুনরায় অপরাধের আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। তিনি এসব বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন বলে জানান।
গত ১৬ মাসে নিম্ন আদালত থেকেও কিছু বিতর্কিত জামিনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক মামলার নথিতে আসামির অপরাধে সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট তথ্য নেই, এমনকি দলীয় পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়নি। তবুও যেনতেনভাবে জামিন দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্ট্যাটাসের শেষাংশে ড. আসিফ নজরুল জামিন বাণিজ্যে জড়িতদের সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিলে এর দায় শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও বহন করতে হবে, এমন কঠোর বার্তাও দেন তিনি।