আওয়ার টাইমস নিউজ।
রাজনীতি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ওই সময় থেকেই আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ বেশ কয়েকজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তারা ফেরেননি। আদালতে অনুপস্থিত থেকে আত্মগোপনে থাকায় তাদের অনেককে ইতোমধ্যেই ফেরারি ঘোষণা করা হয়েছে।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশোধিত ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী আদালত কর্তৃক ফেরারি ঘোষিত হলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। মঙ্গলবার ইসি বৈঠকে এই সংশোধনী খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, মামলার রায় না হলেও শুধু শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় যদি আদালত কাউকে ফেরারি ঘোষণা করে, তবে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এর ফলে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নতুন সংশোধনীতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থী বা প্রস্তাবকারীকে সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে অনেক পলাতক রাজনীতিবিদের পথ রুদ্ধ হবে। এছাড়া অর্থপাচার ও অন্যান্য ফৌজদারি মামলায় ফেরারি ঘোষিত হলেও কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না।
ইসি সূত্র জানায়, এবার আরপিওতে অন্তত ৪৫টি বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, একক প্রার্থী থাকলে ‘না ভোট’ দেওয়ার বিধান, সেনা–নৌ–বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ডকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা, দেশে ও বিদেশে থাকা সম্পদের সঠিক তথ্য হলফনামায় বাধ্যতামূলক করা, ভুয়া তথ্য দিলে নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা, নির্বাচনি জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা, জোটভুক্ত প্রার্থী নিজ দলের প্রতীকে ভোট করা, স্থানীয় ভোটারকেই এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা এবং পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফের ইসির হাতে আনা। পাশাপাশি ইভিএম সংক্রান্ত সব ধারা বাতিল করা হয়েছে।
ইসি কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “আমরা আরপিও খসড়া চূড়ান্ত করেছি, এখন তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অধ্যাদেশ জারি হলে নতুন বিধান কার্যকর হবে।” তিনি আরও জানান, ফেরারিদের অযোগ্য ঘোষণার বিধান আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছিল, এবার তা সংসদ নির্বাচনেও যুক্ত হলো।
তবে সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী মনে করেন, এই বিধান যেমন ইতিবাচক দিক তৈরি করবে, তেমনি প্রশাসনের প্রভাব খাটালে কেউ কেউ হয়রানির শিকার হতে পারেন।
সব মিলিয়ে, নতুন বিধান কার্যকর হলে আওয়ামী লীগের বহু পলাতক নেতাই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।