আওয়ার টাইমস নিউজ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের বাজারে অভূতপূর্ব উত্থান দেখা দিয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সের মূল্য ৪,০০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কোনো সীমান্ত ছাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে না এবং তা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমান স্বর্ণবাজারের পরিস্থিতি “প্রজন্মে একবার ঘটে এমন ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষক জন মেয়ার বলেন, “স্বর্ণের এই উত্থান শুধু দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি একটি সংকেত যে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা চলছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বর্ণের মূল্যে এই প্রবল বৃদ্ধি একাধিক অনিশ্চিত উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ নীতি ও ডলারের অস্থিরতা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়িত্ব
ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা
বিনিয়োগ বিশ্লেষক ডেভিড উইলসন জানান, “বাজারে এই উত্থান একাধিক ঝুঁকির কারণে হচ্ছে। শেয়ারবাজার বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগকারীরা এখন স্বর্ণকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে গ্রহণ করছেন।”
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতাও এই দামের ঊর্ধ্বগতি বাড়াচ্ছে। মেটালস ফোকাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১,০০০ মেট্রিক টনের বেশি স্বর্ণ ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। চলতি বছরও প্রায় ৯০০ টনের বেশি স্বর্ণ কেনার পূর্বাভাস রয়েছে।
অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও স্বর্ণের উত্থানের প্রভাব পড়েছে। রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামও এই পরিস্থিতিতে বাড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলতি উত্থান ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য ৪,৯০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্লেষক ড্যান স্মিথ বলেন, “স্বর্ণ এখন কেবল বিনিয়োগের উপকরণ নয়, এটি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতীক। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্থরতা এবং বাণিজ্য নীতির কঠোরতা, সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায় স্বর্ণে ঝুঁকছেন।”
বিশ্বজুড়ে এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে স্বর্ণের গুরুত্ব, অর্থনীতিতে যে সংকেত দিচ্ছে তা ভবিষ্যতে আর্থিক বাজারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।