
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও থামছে না আগুনের গোলা, ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর মৃত্যুর আর্তনাদ। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ইসরায়েল–ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি চুক্তির কালি শুকাতে না শুকাতেই আবারও গাজা আকাশ কাঁপছে বোমা বিস্ফোরণে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর সম্মতির ঘোষণা দেন বুধবার স্থানীয় সময় রাতে। ট্রাম্প দাবি করেন, “এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন শান্তির যুগের সূচনা করবে।”
কাতারও চুক্তিটি বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “এই সমঝোতার ফলে সব বন্দি মুক্তি পাবে, ত্রাণ প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না, আর গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে।”
তবে বাস্তবতা বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। চুক্তি স্বাক্ষরের ঘণ্টা না পেরোতেই গাজা নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সতর্ক করে বলেন, “উত্তর গাজা এখনো বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র। কোনো ফিলিস্তিনি নাগরিক যেন সেখানে ফিরে না যায়।”
এমন সতর্কতার মধ্যেই সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীরা মাইক হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন যুদ্ধবিরতির বার্তা ছড়াতে। অথচ সেই একই মুহূর্তে আকাশে দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলি ড্রোনের ছায়া ও বিস্ফোরণের আলো।
গাজা সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর নিশ্চিত করেছেন, “চুক্তি ঘোষণার পরও গাজা সিটি ও আশপাশে একাধিক বিমান হামলা হয়েছে। রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে আকাশ কেঁপে উঠেছে।”
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, বুধবার রাতের পরও গাজার উত্তরাঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হতাহতের নির্ভরযোগ্য তথ্য না পাওয়া গেলেও স্থানীয় সূত্র বলছে, কয়েকটি পরিবারের সবাই নিখোঁজ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও হামলা চালিয়ে ইসরায়েল স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, “গাজার ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে।” অন্যদিকে ফিলিস্তিনি পক্ষের দাবি, এই চুক্তি কেবল রাজনৈতিক প্রচারণা, বাস্তবে কোনো মানবিক পরিবর্তন আসেনি।
এমন এক সময়ে যখন বিশ্বের নানা দেশে গাজা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে, তখনই ইসরায়েলের এই নতুন আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া ইসরায়েলের এই হামলাকে “চুক্তিভঙ্গ ও যুদ্ধাপরাধের ধারাবাহিকতা” বলে নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় এখনো হাজারো মানুষ আশ্রয়হীন, শিশুদের কান্না থামছে না, হাসপাতালগুলো ওষুধশূন্য। শান্তির চুক্তি কেবল কাগজে লেখা রয়ে গেছে, বাস্তবের গাজা এখনো ধ্বংসস্তূপের রাজ্য।
সূত্র: Al Jazeera, AFP, The Guardian



























