আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশ একটি ‘কালো মেঘের’ নিচে ছিল। কারও ক্ষেত্রে এই অন্ধকার ছিল তীব্র; কেউ আবার নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, “কোনো বাংলাদেশিকেই রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না-সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।”
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ একটি ‘কালো মেঘের’ নিচে ছিল। কেউ তীব্রভাবে আক্রান্ত হয়েছে, কেউ নীরব ছিল। বিশেষ করে তৎকালীন ‘পতিত সরকারের’ বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া মানুষের জন্য ভয়, মিথ্যা মামলা, রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, গুম, নির্যাতন-এসব ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। অসংখ্য পরিবার অপেক্ষায় থেকেছে তাদের প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কখনও ঘরে ফিরেনি।
তারেক রহমান বলেন, এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। তবে অত্যাচারের শিকার কেবল বিএনপি নয়-ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মতপ্রকাশের অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা—সব মৌলিক মানবাধিকারই ছিল হুমকির মুখে।
তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে তাকে কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। পত্রিকা, টিভি কিংবা সামাজিক মাধ্যমে তার কোনো বক্তব্য প্রচার না করার নির্দেশনা ছিল। তবুও তিনি গণতন্ত্র, অধিকার ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
তারেক রহমান তার মা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস, রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করার চেষ্টা—এসবই ছিল এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবু খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি। তার একটাই বিশ্বাস-‘অধিকার সবার, ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।’
তিনি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন; জেল, নির্যাতন, বড় ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু—এসব যন্ত্রণাকে পরিবারকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তিনি বলেন, কষ্ট মানুষকে আরো মহান করে তোলে, এবং খালেদা জিয়া সে উদাহরণ।
তারেক রহমান বলেন, এখন বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু-একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ। যেখানে ভিন্নমত গণতন্ত্রের অংশ হবে, নিপীড়নের কারণ নয়; যেখানে কাউকে গুম বা নির্যাতনের শিকার হতে হবে না।
তিনি আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি-এসব নিপীড়নের শিকার বহু মানুষের কথা স্মরণ করেন। বলেন, মানবাধিকার দিবসের বার্তা হলো-এমন নিষ্ঠুরতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি যেন ভবিষ্যতে আর কখনও ফিরে না আসে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতির মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু ভেঙে পড়েনি। বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন ও আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপির লক্ষ্য—একটি বাংলাদেশ গড়া, যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার, কণ্ঠ ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকারই হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।