আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: চব্বিশের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তরুণ আলেম মাওলানা শফিকুর রহমান। যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডার একটি ছবি ভাইরাল হলে তিনি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। রামপুরায় আন্দোলনকারীদের মাঝে খাবার বিতরণ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতেও আহত হন তিনি।
কিন্তু সেই আলোচিত জুলাইযোদ্ধা আজ চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িওয়ালা, যিনি স্থানীয় শ্রমিকলীগের নেতা, তার রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে শফিকুরের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা। ঋণের চাপে জর্জরিত তিনি, সংসারও ভেঙে গেছে। মেয়েসহ স্ত্রী আলাদা হয়ে গেছেন। এখন সরকারি স্বীকৃতি, নতুন করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা এবং ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য কামনা করছেন তিনি।
আন্দোলন থেকে অনিশ্চয়তার পথে
গত বছরের ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা সেতুতে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মাওলানা শফিকুর রহমান। ভিডিওটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই দিনই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শহীদ আবু সাঈদের গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন। সন্ধ্যায় মাদরাসায় ফেরার পর বাড়িওয়ালার ছেলে রাব্বী খন্দকার কয়েকজন নিয়ে এসে তাকে হুমকি দিয়ে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেন।
পরদিন রামপুরার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে আহত হন শফিকুর। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে তিনি চিকিৎসা নেন।
মাদরাসা বন্ধ, শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ
ভাটারার ছোলমাইদ এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছিল তার মাদরাসাতুল ফুনুন আল ইসলামিয়া, ঢাকা। প্রিন্সিপাল ছিলেন শফিকুর নিজেই। সেখানে নূরানি, নাজেরা ও হেফজ বিভাগে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী ও সাতজন শিক্ষক ছিলেন।
কিন্তু বাড়িওয়ালার চাপের মুখে অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত নভেম্বরের দিকে পুরো মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষকরা কয়েক মাসের বেতনও পাননি।
মাওলানা শফীকুরের সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
মাদরাসার মেয়েশিশু বিভাগের প্রধান ছিলেন শফিকুরের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। কিন্তু অভাব-অনটন, চাপ এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি সংসার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। দুই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সংসার ভেঙে দেন তিনি। তালাকনামা পাঠালেও শফিকুর এখনও সই করেননি।
সহায়তার অপেক্ষায়
শফিকুর জানান, তিনি বরাবরই আহত জুলাইযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু নিজের জন্য কোনো সহায়তা চাননি। তবে বন্ধ মাদরাসা, পাঁচ লাখ টাকার ঋণ ও সংসার ভাঙনের পর তিনি সম্প্রতি সরকারি স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জন্ম জেলা চাঁদপুর প্রশাসন থেকেও তার তথ্য নেওয়া হয়েছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান বলেন, “আমরা মাওলানা শফিকুর রহমানের বিষয়টি শুনেছি। তিনি যোগাযোগ করলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আন্দোলনে আলোচিত হয়ে ওঠা এক তরুণ আলেম এখন দিশেহারা। আবারও মাদরাসা দাঁড় করানো এবং সম্মানের সঙ্গে সমাজে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তবে এজন্য দরকার সরকারের স্বীকৃতি ও সহযোগিতা।