আওয়ার টাইমস নিউজ।
অর্থনীতি: সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনর্বিবেচনায় যাচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে সুদের হার আরও কমানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের এই পদক্ষেপকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ইতিবাচকভাবে দেখলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনগণকে ধীরে ধীরে ট্রেজারি বন্ড ও বিলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত জুন থেকে কার্যকর রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সরকার এখন চায় জনগণ বিকল্প বিনিয়োগমুখী হোক। এজন্য ট্রেজারি বন্ড ও অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর দিকেই আমরা কাজ করছি।”
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও এই নীতিকে সমর্থন জানানো হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “বর্তমানে মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নেমে আসায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা কমানো স্বাভাবিক পদক্ষেপ। তা না হলে সরকারের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। মন্দা বিনিয়োগ ও সীমিত কর্মসংস্থানের বাস্তবতায় অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম তৈরি জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক প্রায় ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, নতুন বিক্রির চেয়ে পুরনো সঞ্চয়পত্রের আসল ও সুদ পরিশোধেই বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “যারা দীর্ঘদিন সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করতেন, তাদের এখন বিকল্প বিনিয়োগ উৎসের কথা ভাবা উচিত। কারণ এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, সঞ্চয়পত্রের সুদনীতি নিয়ে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে। ফলে সরকারের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো, একদিকে জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অন্যদিকে ঋণের চাপ সামলানো।