আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বনদস্যু বাহিনী। স্থানীয় বনজীবীদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে বনাঞ্চলে দস্যুদের ঘোরাফেরা বেড়েছে। পুরোনো আত্মসমর্পণকারী দস্যুরা আবারও বনে সক্রিয় হয়েছে এবং নতুন দলও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দুলাভাই বাহিনীসহ প্রায় ২০টি দস্যু বাহিনী সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছিল। তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজারের বেশি গুলি জমা দেয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সরকার সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করলেও, ২০২৪ সালের আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে অন্তত ১৩ জন সাবেক দস্যু আবার অপরাধচক্রে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বনদস্যু বাহিনী শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলে ও বনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, সক্রিয় বাহিনীর মধ্যে রয়েছে, আসাবুর, করিম শরীফ, আবদুল্লাহ, মঞ্জুর, দয়াল, রবি, দুলাভাই, রাঙ্গা, সুমন, আনারুল, হান্নান, আলিফ, জাহাঙ্গীর, দাদাভাই, ইলিয়াস, মজনুসহ অন্যান্য ছোট বাহিনী। প্রতিটি বাহিনীতে ১৫–৪০ জন সদস্য রয়েছে এবং সকলের হাতে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কারাগার থেকে পালানো কয়েকজন আসামি নতুন করে দস্যুতায় যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরার আবদুল্লাহ তরফদার বিশেষভাবে সক্রিয়। গত এক বছরে বনদস্যুদের কারণে কমপক্ষে ৩০০ জেলে ও বনজীবী অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধুমাত্র গত তিন মাসে শতাধিক জেলে জিম্মি হয়েছেন এবং কিছু মানুষ মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। এখনও অন্তত ১৫–২০ জন জেলে বিভিন্ন বাহিনীর কাছে বন্দি রয়েছে।
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে দস্যুদের আধিপত্য বেশি। মরাভোলা, আলীবান্দা, ধনচেবাড়িয়া, দুধমুখী, শ্যালা, পশুর ও আন্দারমানিক এলাকায় তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছে, বনদস্যুদের গডফাদার ও মধ্যস্থতাকারীরা মুক্তিপণ আদায় করে। সাধারণত প্রতি নৌকায় ২০–৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। অপহৃত হলে মুক্তিপণ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আত্মসমর্পণকারী কয়েকটি বাহিনীর প্রধান জানান, মামলা-হয়রানি, বেকারত্ব ও নিরাপত্তার অভাবে তারা অপরাধ জগতে ফিরে আসছেন। তবে সঠিক নিরাপত্তা, স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চান।
ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বলেন, সুন্দরবনে দস্যুতার পুনরুত্থান উপকূলের অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। দ্রুত শক্তিশালী অভিযান ও পুনর্বাসন ছাড়া এই সমস্যা কমানো যাবে না।
মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের লে. কমান্ডার আবরার হাসান জানিয়েছেন, গত এক বছরে ২৭টি অভিযানে ৪৪ দস্যুকে আটক করা হয়েছে, ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৮ জন জেলেকে জীবিত ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করীম চৌধুরী জানান, দস্যুদের অবস্থান চিহ্নিত করতে টহল বাড়ানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে অভিযান চলছে।