আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দেশে টাকা পাঠানোও কি এখন বিলাসিতা? ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন আইনে রেমিট্যান্সে বসতে যাচ্ছে ৫% কর, যার প্রভাব পড়তে পারে লাখো প্রবাসীর পরিবারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসীরা যদি দেশে টাকা পাঠান, তাহলে সেই অর্থের ওপর বসতে পারে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ কর। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন আইন "One Big Beautiful Bill Act" যদি পাশ হয়, তাহলে এই নিয়ম কার্যকর হবে—যার ফলে সরাসরি আর্থিক ধাক্কা খাবেন লাখো প্রবাসী, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকরা।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ বাজেট কমিটিতে ১,১১৬ পাতার এই প্রস্তাবিত বিলটি ১৭-১৬ ভোটে পাশ হয়, যার ফলে এটি এখন কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে। আইনে রূপ নিলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এইচ-১বি, এফ-১ ভিসাধারী, এমনকি গ্রিনকার্ডধারী প্রবাসীদেরও এই কর দিতে হবে।
এখানে করের কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি—যার অর্থ, ১০ ডলার হোক বা ১০ হাজার ডলার, যেকোনো অঙ্কের অর্থ পাঠালেই গুনতে হবে কর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় ৪৫ লাখ ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক রয়েছেন। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই তারা দেশটিতে ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা ভারতের মোট রেমিট্যান্সের ২৮ শতাংশ।
এই প্রস্তাবিত কর কার্যকর হলে ভারতীয়দের বছরে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার কর দিতে হবে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এতে দেশে টাকা পাঠানোর আগ্রহ কমে যাবে, ফলে প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং পারিবারিক ব্যয়ে।
একই রকমভাবে প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি তাদের পরিবারকে নিয়মিত টাকা পাঠিয়ে থাকেন। কর আরোপের ফলে পাঠানো অর্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা পারিবারিক জীবনে চাপ সৃষ্টি করবে এবং দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই বিল অনুসারে শুধু পারিবারিক খরচের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কেউ যদি শেয়ার বিক্রি করে বা বিনিয়োগ থেকে লাভ করে দেশে অর্থ পাঠান, সেটিও করের আওতায় পড়বে। এর ফলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং দেশে বিনিয়োগ করা আরও জটিল হয়ে উঠবে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় করে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, যার ফলে দেশের ভেতরে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই এই কর আরোপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানো এবং অবৈধ অভিবাসীদেরও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
তবে অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ—যার মাধ্যমে দেশের করদাতাদের সন্তুষ্ট রাখা ও অভিবাসনবিরোধী অবস্থানকে দৃঢ় করার চেষ্টা চলছে।
রিপাবলিকানদের সমর্থনে এই বিল সামনের দিকে এগোচ্ছে, যদিও ট্রাম্পের নিজের দলেই এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্তি আছে। বাজেট কমিটির কট্টরপন্থি অংশ প্রথমে বিল আটকে দিলেও শেষ পর্যন্ত তা অল্প ব্যবধানে পাস হয়েছে এবং এখন কংগ্রেসে চূড়ান্ত ভোটের অপেক্ষায়।