আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যুদ্ধ, অবরোধ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রবেশে ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টি করায় চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে গাজাবাসী। এরই মধ্যে অন্তত ৭১ হাজার শিশু ও ১৭ হাজারেরও বেশি মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ।
ইসরা'ইলি অবরোধের অংশ হিসেবে গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সহায়তা প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ইউনিসেফের ১২ মে প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার অন্তত ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বর্তমানে চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে এবং সমগ্র গাজা জনগোষ্ঠীই ভয়ংকর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন, “গাজার পরিবারগুলো না খেয়ে আছে, অথচ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। আমরা সহায়তা পৌঁছাতে পারছি না, কারণ করিডোর সম্পূর্ণ বন্ধ।” তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি আমরা দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষা করি, তাহলে তা অনেকের জন্য দেরি হয়ে যাবে।”
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, “দুর্ভিক্ষ হঠাৎ আসে না। এটি আসে যখন খাদ্য নেই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত হয়।” তিনি সব পক্ষকে এই বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ইতোমধ্যে খাদ্যের দাম গাজায় আকাশচুম্বী হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অথচ সীমান্তে পড়ে আছে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা, যা ১০ লাখ মানুষকে চার মাস খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। আটকে আছে শত শত প্যালেটভর্তি পুষ্টিকর ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীও।
এক মাস আগে গাজায় ডব্লিউএফপি’র সব বেকারি বন্ধ হয়ে যায়, গমের আটা ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায়। থেরাপিউটিক খাবারের মজুতও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মানবিক এই সংকটে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপি আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষায় মানবিক সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষে ডুবে যাবে এবং মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হবে।