
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ ২৯ মে, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের অসামান্য ত্যাগ ও অবদান স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
সকালে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/র্যালি-২০২৫’-এর মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে এই দৌড় উদ্বোধন করেন। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা।
এই দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সশস্ত্র বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে তা অনুকরণীয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সংঘাত প্রতিরোধ, মানবাধিকার রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও আমাদের শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে শান্তিপ্রিয় একটি জাতি হিসেবে তুলে ধরবে।”
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে, যার আওতায় বিশ্বের ৪৩টি দেশে মোতায়েন করা হয়েছে দুই লাখ ৫৫৮ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দেশে বাংলাদেশের ৫ হাজার ৮১৮ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন, যাদের মধ্যে ৪৪৪ জন নারী। শান্তিরক্ষা অভিযানে দায়িত্ব পালনের সময় এখন পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন ১৪৪ জন, যাদের মধ্যে ১৪১ জনই সেনাবাহিনীর সদস্য।
বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশগ্রহণ শুরু হয় ১৯৮৯ সালে নামিবিয়াতে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ২১ হাজার ৮১৫ জন পুলিশ সদস্য ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদ হয়েছেন পুলিশের ২৪ জন সদস্য। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ সুদান এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘের অধীনে কর্মরত রয়েছেন ১৯৯ জন বাংলাদেশি পুলিশ শান্তিরক্ষী, যাদের মধ্যে ৭১ জন নারী। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত হচ্ছেন এবং এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯২৭ জন নারী পুলিশ বিভিন্ন দেশে মিশনে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে একসময় শীর্ষে অবস্থান করত এবং এখনো বিভিন্ন দেশের কাছে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদান আজ সমগ্র মানবজাতির শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।