
আওয়ার টাইমস নিউজ।
স্বাস্থ্য: গ্রীষ্মকাল মানেই রসালো ফলে ভরপুর বাজার। আম, লিচু, আনারস, পেঁপে, কাঁঠালের মতো ফলগুলো যেমন শরীর ঠান্ডা রাখে, তেমনি প্রাণ জোগায় এই গরমে। কিন্তু ফল পচে যাওয়ার ভয়েই অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এগুলোতে ব্যবহার করছে ভয়ংকর এক রাসায়নিক—ফরমালিন।
অথচ এই ফরমালিন খালি চোখে দেখা যায় না, গন্ধও প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে নিজের অজান্তেই আমরা এই বিষ শরীরে নিচ্ছি প্রতিদিন। বিষয়টি শুধু উদ্বেগজনকই নয়, দীর্ঘমেয়াদে ভয়ংকরও বটে।
ফরমালিন কী এবং কেন ক্ষতিকর?
ফরমালিন হলো একটি সংরক্ষণকারী রাসায়নিক দ্রব্য, যার মূল উপাদান ফরমালডিহাইড। এটি মৃতদেহ সংরক্ষণ, ল্যাবরেটরিতে নমুনা রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু খাবারে এর ব্যবহার মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফরমালিন এর ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে শরীরে জমতে জমতে ধ্বংস করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
ফরমালিনে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
১. হজমে সমস্যা:
ফরমালিন পেটে ঢুকলে হতে পারে তীব্র পেটব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, বদহজম ও ডায়রিয়া।
২. শ্বাসতন্ত্রে ক্ষতি:
হাঁচি-কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। হাঁপানি রোগীদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক।
৩. ত্বকে প্রতিক্রিয়া:
চুলকানি, র্যাশ, ত্বকের জ্বালা এবং চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
৪. চোখে প্রভাব:
ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনা ধ্বংস করে দিতে পারে, ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে বা স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
৫. অভ্যন্তরীণ অঙ্গ নষ্ট:
যকৃত (লিভার), কিডনি, পাকস্থলী ও অন্ত্রের কোষ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। লিভার সিরোসিস বা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৬. ক্যানসারের আশঙ্কা:
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে ফুসফুস, গলবিল বা পাকস্থলীর ক্যানসার হতে পারে।
৭. গর্ভের শিশুর ক্ষতি:
গর্ভবতী মা যদি ফরমালিনযুক্ত খাবার খান, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি, বিকলাঙ্গতা বা মানসিক প্রতিবন্ধিতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৮. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস:
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, যেকোনো সংক্রমণ সহজে ঘায়েল করতে পারে।
তাই সচেতনতা ছাড়া রক্ষা নেই, গরমে ফল খাওয়া জরুরি—শরীরকে সুস্থ ও ঠান্ডা রাখতে এসব ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সতর্ক না হলে ফল হয়ে উঠতে পারে শরীরের ধ্বংসের হাতিয়ার।
ফল কেনার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলুন:
১. অস্বাভাবিকভাবে চকচকে, অতিরিক্ত টাটকা বা কৃত্রিম রঙের ফল এড়িয়ে চলুন
২. ফল কেনার পর লবণ বা ভিনেগার মেশানো পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন
৩. পরিচিত ও বিশ্বস্ত দোকান বা কৃষকের হাট থেকে ফল কিনুন
৪. ফল কাটার পর কৃত্রিম গন্ধ বা রং দেখলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
৫. সম্ভাব্য হলে অর্গানিক বা দেশীয় উৎপাদিত ফল কিনুন
শেষ কথা: বিষ নয়, প্রকৃতির উপহার খান
এই গ্রীষ্মে ফল খাবেন নিশ্চয়ই, তবে সেটি যেন প্রকৃতির উপহার হয়, বিষ না হয়। একটুখানি সচেতনতা আপনার পরিবারকে রাখতে পারে সুস্থ ও নিরাপদ।
নিজের জন্য, সন্তানদের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের জন্য ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়া এখন শুধু প্রয়োজন নয়, বরং দায়িত্ব।