
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে মাত্র দুই বছরের শিশু আয়েশা নূর। নিথর মেয়ের দেহ কোলে নিয়ে হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা সাজ্জাদুন নূর। বুকফাটা আর্তনাদে কেঁপে উঠে চারপাশ “আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে? আমি হয়তো গুনাহ করেছি, কিন্তু আমার দুই বছরের বাচ্চাটা কী করেছে!”
ঈদুল আজহার ছুটিতে স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাসন্তান আয়েশাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন সাজ্জাদুন। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা হন বোয়ালখালীর পূর্বগোমদণ্ডী ইউনিয়নের পথে। কিন্তু পথে কাল হয়ে দাঁড়ায় কালুরঘাট সেতু। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন সেতুর ওপর ওঠার পর একটি বিকল অটোরিকশা আটকে থাকায় পেছনের কয়েকটি যানও দাঁড়িয়ে পড়ে। এমন সময় ট্রেনটি সংকেত উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে সেতু পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় লিপ্ত হয়।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় আয়েশা এবং আরও দুইজন। আহত হন আরও অন্তত তিনজন। আহতদের মধ্যে আয়েশার মা জুবাইয়া ইসরাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ আছেন। আয়েশাকে নেওয়া হয় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মর্মান্তিক সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, সাজ্জাদুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলছেন, “এই পানির বোতলটা আয়েশা পানি খেতে চাইছিল বলে কিনেছিলাম, এখন আর কিছু রইল না।”
সাজ্জাদুন পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ছোট্ট আয়েশা ছিল তাদের সংসারের একমাত্র সন্তান, স্নেহভরা ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাটে ভাড়া বাসায় স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। কিন্তু সেই ভালোবাসার নীড় এক মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় কালুরঘাট সেতুর ব্যবস্থাপনা ও ট্রেন চলাচলের নিয়মিত অব্যবস্থাপনার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। জানালিহাট স্টেশনমাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন জানান, ট্রেনটি সেতুতে ওঠার আগে সংকেত নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যায়, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।’
চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনায় আয়েশাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাতেই আয়েশার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন পরিবার। যেখানে যাওয়ার কথা ছিল হাসিমুখে ঈদ উদযাপন করতে, সেখানে ফিরলেন শিশুকন্যার নিথর দেহ নিয়ে। সাজ্জাদুনের হৃদয়বিদারক আর্তনাদ যেন এই দেশের প্রতিটি বিবেকবান হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করে দিয়ে গেল, ও আমার আয়েশা মা, তুই কোথায় গেলি রে…