
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর জন্য উৎসবের পাশাপাশি একটি আত্মত্যাগের মহান উপলক্ষ। এই দিনে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, কোরবানির পর গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ইসলামী শরিয়তের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কাদেরকে গোশত দেওয়া যাবে, আর কাদেরকে নয়—এ নিয়ে সমাজে প্রচলিত আছে বহু ভুল ধারণা। আসুন, কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জেনে নিই কোরবানির গোশতের সঠিক বণ্টন ও প্রাপ্য হকদার কারা।
কোরআনের দিকনির্দেশনা: তাকওয়াই মূল
আল্লাহ তাআলা বলেন:
> ﴿لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَـٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ﴾
“তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
সূরা হজ্জ: ৩৭
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়, কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাকওয়া অর্জন। সুতরাং শুধু পশু জবাই নয়, বরং ইবাদতের প্রতিটি অংশ—including গোশত বণ্টন—আল্লাহর বিধান অনুযায়ী হওয়া জরুরি।
রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ: খাও, সংরক্ষণ করো ও দান করো
হাদিসে এসেছে—
> «كُلُوا وَادَّخِرُوا وَتَصَدَّقُوا»
“তোমরা খাও, সংরক্ষণ কর এবং দান কর।”
সহিহ মুসলিম: ১৯৭১
এই হাদিসের ভিত্তিতে ইমামগণ বলেন, কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব (সুন্নাতস্বরূপ)।
কোরবানির গোশতের তিন ভাগের সুন্নতি নিয়ম:
১. এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য
২. এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য
৩. এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য
এভাবে বণ্টন করলে আত্মত্যাগ, সামাজিক দায়িত্ব এবং মানবিকতা—এই তিনটি দিকেই ভারসাম্য রক্ষা হয়।
যাঁরা কুরবানীর গোশতের হকদার:
দরিদ্র মুসলমান (যারা যাকাত গ্রহণ করতে পারে)
গরিব আত্মীয় ও প্রতিবেশী
এতিম ও মিসকিন
গরিব মুসাফির
কোরবানি দিতে অক্ষম ব্যক্তি
যাঁদের দেওয়া যাবে না:
অমুসলিম (যেহেতু কোরবানি একটি ইবাদত এবং কেবল মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত)
ধনী মুসলমান (যারা যাকাত গ্রহণ করতে পারে না)
ব্যবসায়িক বিনিময়ের উদ্দেশ্যে দেওয়া (হারাম)
নিজের স্ত্রী, সন্তানদের ‘দান’ হিসেবে দেওয়া (কারণ তারা নিজের পরিবারের অংশ)
ফিকহি বিশ্লেষণ:
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে—
> “গোশতের কিছু অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা সুন্নাত। তবে পুরোটা নিজের জন্য রাখা মাকরুহ নয়, কিন্তু তা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ নয়।”
আল-হিদায়া
অর্থাৎ কেউ পুরো গোশত নিজে খেলে গুনাহ হবে না, তবে এটি কৃপণতার পরিচয় হিসেবে বিবেচিত।
যেসব ভুল আমরা প্রায়ই করি:
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিতরণ করলেও তারা যদি ধনী হন, তাহলে তা সওয়াবের কাজ নয়
কোরবানির গোশত দিয়ে রান্না করে ব্যবসা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
কোরবানির গোশত বরফ দিয়ে ফ্রিজে রেখে বিক্রি করা জায়েয নয়
অনেকে মনে করেন, শুধু মসজিদের ইমাম বা হুজুরদের দেওয়া ফরজ—এ ধারণা সঠিক নয়, বরং আসল হকদার হলো গরিব-মিসকিনরা
কোরবানির মাধ্যমে সামাজিক সমতা
কোরবানির গোশত বণ্টনের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষ ঈদের আনন্দে অংশ নিতে পারে। এটি শুধু দান নয়, বরং উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানির অর্থ বুঝে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।