আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চায় পাকিস্তান। এই লক্ষ্যে দেশটি আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করেছে। সেই প্রেক্ষিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল রোববার (৮ জুন) যুক্তরাজ্যে পৌঁছায়। উদ্দেশ্য—ভারতের সঙ্গে বিরাজমান পানি চুক্তি, কাশ্মীর পরিস্থিতি এবং সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিধি দলটি লন্ডনে অবস্থান শেষে ব্রাসেলসের উদ্দেশে যাত্রা করবে। এর আগে, তারা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফর করে জাতিসংঘ, মার্কিন কংগ্রেস এবং থিংক ট্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তার সঙ্গে রয়েছেন হিনা রাব্বানি খার, খুররম দস্তগির, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজওয়ারি, বুশরা আনজুম বাট, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।
লন্ডনে পৌঁছে খুররম দস্তগির বলেন, “যেভাবে একসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তেমনিভাবে এবারও আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখুক।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের দায়িত্বহীন আচরণ অব্যাহত থাকলে বড় সংঘাত এড়ানো যাবে না।”
সিনেটর ফয়সাল সুবজওয়ারির মতে, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর অবস্থা শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত শেরি রেহমান বৈঠকগুলোকে 'ইতিবাচক' আখ্যা দিয়ে বলেন, “বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে। তারা বুঝেছে যে, পানি কখনোই রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে না। কাশ্মীরকে এখন গাজার পর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার বলা চলে।”
বুশরা আনজুম বাট বলেন, “পেহেলগাম হামলার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। আমরা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। এই চুক্তির লঙ্ঘন ভবিষ্যতের সব আন্তর্জাতিক চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলবে।”
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি বলেন, “ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ পাকিস্তানের হয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। একটি সর্বদলীয় সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। এ দলে আরও রয়েছেন লোক জনশক্তি পার্টির শম্ভবী চৌধুরী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সরফরাজ আহমেদ, তেলুগু দেশম পার্টির জি এম হারিশ বালায়োগী, বিজেপির তেজস্বী সূর্য ও ভুবনেশ্বর কলিতা, শিবসেনার মল্লিকার্জুন দেবদা এবং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধু।
৫ জুন, এই ভারতীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্সের সঙ্গে বৈঠক করে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক পাল্টাপাল্টি প্রচেষ্টা শুধু দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার দিকেও দৃষ্টি ফেরাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।