আওয়ার টাইমস নিউজ।

রাজনীতি: সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে নিয়ে গত এক মাস ধরে যে ‘গোপন পলায়ন’ কিংবা ‘বিপদজনক বিদেশগমন’ নিয়ে দেশজুড়ে গুঞ্জন, উদ্বেগ ও রাজনৈতিক জলঘোলা চলছিল, তার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তিনি দেশে ফিরেছেন। ১০ জুন ভোরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ফলে নিশ্চিত হলো—তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাননি, বরং পূর্বনির্ধারিত চিকিৎসার জন্যই বিদেশে ছিলেন এবং নির্ধারিত সময়েই ফিরে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, ৭ মে দিবাগত রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে তিনি গোপনে দেশ ছাড়েন। বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে না আসায় এবং ইমিগ্রেশনে তড়িঘড়ি ক্লিয়ারেন্স পাওয়ায় দেশজুড়ে সন্দেহ তৈরি হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্তকে বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এমনকি গঠিত হয় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও। সরকারপক্ষ একদিকে এ ঘটনায় নীরব থাকলেও, বিরোধীদল এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বড় অংশ অভিযোগ তোলে—সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ যাত্রা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সম্ভবত ‘অবৈধ প্রস্থান’।

তবে আবদুল হামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসার, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়া ছিল একান্ত প্রয়োজনীয় এবং এটি একেবারে পূর্বনির্ধারিত। তার স্ত্রী রাশিদা খানমও আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন। আজ সকালে বিমানবন্দরে তার কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর হয়নি, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ফলে এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে—তার বিদেশ যাত্রা কোনো আইনি বা নিরাপত্তা ইস্যুতে নয়, বরং স্বাস্থ্যজনিত প্রয়োজনেই ছিল।

বিমানবন্দর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি সরাসরি তার বাসভবনে পৌঁছান, যেখানে আগে থেকেই তার চিকিৎসা সাপোর্ট নিশ্চিত করা ছিল। পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কোনো গ্রেপ্তারি নির্দেশনা ছিল না। তার আগমন ও গমন—দুটোই আইনানুগ ছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এই ঘটনা নিয়ে যে নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিল, তা ছিল অতি উত্তেজনাপূর্ণ এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার মাসুদ কামাল বলেন, “গণমাধ্যমের একাংশ এবং কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে প্রমাণ করলেন—তা ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন জল্পনা।” এনসিপির মুখপাত্র সরোয়ার তুষার বলেন, “প্রশাসনের ভেতরের কিছু চক্র এই ঘটনায় অস্থিরতা ছড়াতে চেয়েছিল। সত্য শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে—সাবেক রাষ্ট্রপতির ফিরে আসা তার বড় প্রমাণ।

তবে এ বিষয়ে আরও একটি বিতর্ক রয়েছে—রাষ্ট্রপতির বিদেশ যাত্রায় নাকি ‘উর্ধ্বতন এক দপ্তর’ থেকে ফোনকলের মাধ্যমে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করে, শুরুতে তাকে ইমিগ্রেশন আটকে দেয়, কিন্তু পরে একটি ‘বিশেষ ফোনকলেই’ ছাড়পত্র পায়। যদিও সরকার বা রাষ্ট্রপতি কার্যালয় এই দাবি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।

আবদুল হামিদের শারীরিক অবস্থা এখনও খুব একটা ভালো নয়। ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার ফুসফুসে টিউমার, লিভারে সমস্যা এবং কিডনির জটিলতার কারণে উন্নত চিকিৎসা চলছিল। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি নির্দিষ্ট বাসস্থানে অবস্থান করছেন, যেখানে তার জন্য চিকিৎসক টিম ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।