
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তেহরানের আকাশে ভোররাতের নিস্তব্ধতা চিরে এসে আঘাত হানল ইসরাইলের একটি ক্ষেপণাস্ত্র। মুহূর্তেই ধসে পড়ল একটি ভবন। সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিভে গেল এক তরুণ কবির স্বপ্ন—পারনিয়া আব্বাসি, বয়স মাত্র ২৩।
পারনিয়া ছিলেন কবি, শিক্ষক এবং একজন কন্যা। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে ব্যবস্থাপনায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু পারিবারিক দায়িত্বে কারণে ভর্তি স্থগিত রেখেছিলেন। ইরানের মেল্লি ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখায় তার চাকরি ছিল, যেখানে তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন।
তার প্রিয় বান্ধবী মরিয়ম জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ভবনের ঠিক মাঝখানে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে পারনিয়ার পরিবারসহ ভবনের অনেক বাসিন্দা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। প্রথমেই উদ্ধারকর্মীরা যে মৃতদেহটি তুলে আনেন, সেটি ছিল পারনিয়ার। এরপর আসে তার ১৬ বছরের ছোট ভাই পারহামের নিথর দেহ। পরে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় পারনিয়ার মা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবার মরদেহ।
পারনিয়ার একটি লেখা উদ্ধার হয়েছে তার নোটবুক থেকে—
‘আমি পুড়ে যাই,
আমি বিবর্ণ হয়ে যাই,
আমি এক নীরব তারা হয়ে উঠি,
যে তোমার আকাশে ধোঁয়া হয়ে যায়..
এই চারটি পঙ্ক্তি যেন এখন ইরানের বেদনার ভাষা।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ভবনের ভাঙা মেঝেতে একটি গোলাপি ম্যাট্রেস, পাশে রক্তের ছোপ আর ছেঁড়া কংক্রিট—সব মিলিয়ে যেন মৃত্যুর নিঃশব্দ কবিতা।
ইসরাইল শুরু থেকে দাবি করে আসছে, তারা কেবল সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা করছে। কিন্তু বাস্তবে ইরানের মতো ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেনেও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের রক্তে ভাসছে যুদ্ধের মঞ্চ।
হিন্দ রাজাব নামের গাজার এক শিশুর রক্তমাখা শরীর যেমন বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, তেমনি পারনিয়া আব্বাসির রক্তাক্ত কবিতার খাতা আজ কাঁদাচ্ছে পুরো মুসলিম বিশ্বকে।