আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উছমানীয় যুগে তুর্কি সালতানাতের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারই ছিলো। কুখ্যাত কামাল পাশা ক্ষমতায় এসে সেকুলার তুরস্ক কায়েমের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণের নামে পশ্চিমা রীতি অনুকরণের অংশ হিসেবে ১৯৩৫ সালের ২৭শে এপ্রিল সরকারী ছুটি বদলের একটি আইন করে। এরপর থেকেই শুক্রবারের বদলে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে মুসলিমপ্রধান তুরস্কে সাপ্তাহিক সরকারী ছুটি শনিবার ও রবিবার! এ নিয়ে দীর্ঘ ক্ষোভ রয়েছে দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মাঝে।
তুরস্কে সম্প্রতি সাপ্তাহিক ছুটি রবিবারের বদলে শুক্রবার করার দাবি উঠেছে। কেননা, এদিন মুসলিমরা জুমার নামাজসহ ইসলামী নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। আর এসব কাজে সবার অংশগ্রহণ সহজ করতেই এ দাবি তুলছেন তারা।
অতীতেও নানা সময়ে তুরস্কের সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তনের দাবি উঠেছিলো। সবশেষ গত শুক্রবার দেশটির ধর্মবিষয়ক প্রধান ডঃ আলী আরবাশ পবিত্র জুমার খুতবায় নামাজে সবার অংশগ্রহণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন: আসুন, আমরা কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী বন্ধুদের জন্যে জুমার নামাজে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করি। তা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আসুন, আমরা জুমার নামাজের আলোকে কর্মঘণ্টা ও স্কুলের ক্লাসের সময়সূচি তৈরি করি।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার দাবি ওঠে। অবশ্য তুরস্কের বিরোধী দল পিপলস লিবারেশন পার্টি (ডিএইচকেপি) তথা কামালপন্থীরা এ দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা এটিকে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের শামিল বলে মনে করে!
এদিকে শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটি করার বিরোধীদের সমালোচনা করেছেন আয়া সোফিয়ার সাবেক ইমাম বুইয়ানুকালিন। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন: আশ্চর্যের বিষয় হলো – তারা এমন একটি দেশে বসবাস করে – যেখানকার অধিকাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। অথচ সেখানে কিনা শুক্রবার নয়, বরং শনিবার ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি – যা ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে সম্মানিত দিন। অতএব তারা এ দাবির প্রতি ইতিবাচক না হলে, ধর্মীয় বিষয়গুলো নিজস্ব গতিতে চলতে থাকবে।
উলিফিয়া নামে এক ব্যক্তি এক্স-এ লিখেছেন: সম্মানিত প্রেসিডেন্ট, আপনি আয়া সোফিয়ার শেখ ভেঙেছেন। এখন সময় এসেছে শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা করার।
অপরদিকে তুরস্কের ফেডারেশন অব উইম্যানস এসোসিয়েশন সাপ্তাহিক ছুটির দিন পরিবর্তন করার দাবির বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছে। তুরস্কের ধর্মীয় অধিদপ্তর কর্তৃক জুমার নামাজের ওয়াক্ত মোতাবেক, কর্মঘণ্টা ও ক্লাসের রুটিন সাজানোর দাবিকে সংগঠনটি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা পরিপন্থী অভিমত’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
এদিকে দেশটির বিরোধী দল পিপলস লিবারেশন পার্টি (ডিএইচকেপি) ধর্ম বিষয়ক প্রধানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে! তার বিরুদ্ধে সংবিধান অবমাননা ও পদের অপব্যবহারের অভিযোগ আনে দলটি। ডিএইচকেপি’র আইনজীবী আয়েশা উকুর বলেছেন: আমাদের দেশ ধীরে ধীরে ফ্যাসিবাদী মধ্যযুগীয় ধর্মতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একথা স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্সি অফ রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক প্রকাশিত শুক্রবারের খুতবা সাধারণ মানুষের জীবনে ধর্মীয় হস্তক্ষেপের শামিল। পিপলস লিবারেশন পার্টি হিসেবে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করে যাবো। সূত্র: আল-জাজিরা।