আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা বা হজে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপন, ঘরবাড়ির পরিবেশ ও সামাজিক আচরণেও পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না—কিছু নির্দিষ্ট প্রাণী আমাদের ঘরে আশ্রয় নেয় যা অভাব, অশান্তি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। হাদিসে এমন পাঁচটি প্রাণীর কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, যাদের উপস্থিতি শুধু দুনিয়াবি ক্ষতির কারণই নয়, বরং আখিরাতের ক্ষতির পূর্বাভাসও হতে পারে।
১. মাকড়সা (العنكبوت)
কুরআনের আয়াত:
﴿مَثَلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ ٱلْعَنكَبُوتِ ٱتَّخَذَتْ بَيْتًۭا ۖ وَإِنَّ أَوْهَنَ ٱلْبُيُوتِ لَبَيْتُ ٱلْعَنكَبُوتِ ۖ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ﴾
সূরা আনকাবুত: ৪১
বাংলা অনুবাদ:
যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অভিভাবক বানায়, তারা যেন মাকড়সার মতো—যে নিজের জন্য ঘর বানায়, আর সব ঘরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ঘর হলো মাকড়সার ঘর।
বার্তা:
মাকড়সার জাল প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে গাফিলতা, দুর্বলতা ও অসচ্ছল জীবনের। ইসলামে ঘরকে পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি এবং রুহানিয়াতপূর্ণ রাখতে বলা হয়েছে। মাকড়সার জাল তা নষ্ট করে।
২. ইঁদুর (الفأر)
হাদিস:
خَمْسٌ مِنَ الدَّوَابِّ كُلُّهُنَّ فَاسِقٌ، يُقْتَلْنَ فِي الْحِلِّ وَالْحَرَمِ: الْغُرَابُ، وَالْحِدَأَةُ، وَالْعَقْرَبُ، وَالْفَأْرَةُ، وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ
সহীহ বুখারী: ৩১৩৬ | সহীহ মুসলিম: ১১৯৮
বাংলা অনুবাদ:
পাঁচটি প্রাণী রয়েছে যারা সবই ফাসিক। হালাল বা হারাম – যেকোনো জায়গায় তাদের হত্যা করা বৈধ: কাক, চিল, বিছে, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।
বার্তা:
ইঁদুর ঘরের খাদ্য, কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি করে। এটি শুধু বস্তুগত ক্ষতির নয়, বরং নেকির কমে যাওয়া ও বারাকাহ হারানোর প্রতীক।
৩. গিরগিটি বা চিপকিলি (الوزغ)
হাদিস ১:
كَانَ يَنفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ
সহীহ বুখারী ও মুসলিম
হাদিস ২:
مَن قَتَلَ وَزَغًا فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ، كُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ
সহীহ মুসলিম: ২২৪০
বাংলা অনুবাদ:
গিরগিটি ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে পোড়াতে ফুঁ দিত।
যে ব্যক্তি গিরগিটিকে প্রথম আঘাতেই হত্যা করে, তার জন্য একশত নেকি লেখা হয়।
বার্তা:
গিরগিটি হচ্ছে কপটতা ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। এটি ঘরে থাকলে বরকত কমে যায় এবং অকল্যাণ আসে।
৪. সাপ (الحية)
হাদিস:
إِنَّ لِهَذِهِ الْبُيُوتِ عَوَامِرَ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهَا شَيْئًا فَحَذِّرُوهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنْ بَدَا لَكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فَاقْتُلُوهُ
সহীহ মুসলিম: ২২৩৬
বাংলা অনুবাদ:
এই ঘরগুলোতে জিনেরা বসবাস করে। যদি তোমরা এর মধ্যে কিছু দেখো (যেমন সাপ), তবে তিনবার সতর্ক করো। এরপরও যদি থেকে যায়, তাহলে হত্যা করো।
বার্তা:
সাপ শুধু দুনিয়াবি বিপদের নয়, বরং জিন/শয়তানের রূপে আসা আধ্যাত্মিক বিপদেরও প্রতীক। তাই সচেতন থাকা জরুরি।
৫. কুকুর (الكلب)
হাদিস:
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ
সহীহ বুখারী: ৩২২৫ | সহীহ মুসলিম: ২১০৪
বাংলা অনুবাদ:
যে ঘরে কুকুর অথবা (জীবজন্তুর) ছবি থাকে, সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।
বার্তা:
ফেরেশতা না থাকলে ঘর থেকে বরকত চলে যায়। কুকুর রাখা শুধু অভাবই নয়, বরং রুহানিয়াতের পতনের কারণ হতে পারে।
এই পাঁচটি প্রাণীর মধ্যে একটিও যদি ঘরে থাকতে শুরু করে এবং আমরা তা অবহেলা করি, তবে তা আমাদের রিজিক, শান্তি এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে দিতে পারে। তাই প্রিয় পাঠক, আপনি আপনার ঘরকে পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন এবং ইসলামি রুহানিয়াতে পরিপূর্ণ রাখুন। হাদিস ও কুরআনের আলোকে নিজের ঘরকেও করুন বরকতময় এক শান্তির আশ্রয়।