আওয়ার টাইমস নিউজ।
মধ্যপ্রাচ্যে টান টান উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইরানের শর্ত মেনেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলো ইসরাইল। মাত্র ১২ দিনেই থেমে গেল সেই যুদ্ধ, যার শুরু হয়েছিল এক অগ্নিগর্ভ আঘাত দিয়ে।
১৩ জুন ইসরাইলের আকস্মিক হামলার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুতই জটিল রূপ নেয়। মনে পড়ে যাচ্ছিল ইরান-ইরাক ৮ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দৃশ্যপট। বিশ্বের বাজারে তেলের অস্থিরতা, রাজনৈতিক জোট-ভাঙনের শঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা, সবকিছু মিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু বাস্তবতা গিয়ে ঠেকল ভিন্ন এক ফলাফলে। মুখে বিজয়ের ঢাক বাজালেও যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানের চাপের কাছে স্পষ্টভাবে পিছু হটেছে তেলআবিব। মঙ্গলবার সকালে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইরানের প্রস্তাব অনুযায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
এর মাত্র দুই দিন আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর আসে, ওয়াশিংটনে ইসরাইলের কূটনৈতিক দপ্তর যুদ্ধ বন্ধের জন্য জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসনের কাছে। সুতরাং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা যতটা আকস্মিক, এর ইঙ্গিত তার আগেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল।
ইরানে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। রাজপথে মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দ, শহরজুড়ে বিজয় মিছিল, এবং সর্বস্তরের মানুষের মুখে একটাই ভাষ্য—“প্রতিরোধ জিতেছে”। অন্যদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেলিভিশনে ‘ঐতিহাসিক বিজয়ের’ দাবি করলেও বাস্তবতা ছিল নিঃশব্দ। জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই, বিজয়ের ঢোল বাজেনি তেলআবিবে।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমেও সেই নীরবতার প্রতিচ্ছবি। কোথাও বিজয়-পার্টির খবর নেই, বরং যুদ্ধবিরতির খবরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ‘স্বস্তি’-র বার্তা। যুদ্ধ থামার পরই তেলআবিবের স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে, বাংকারে থাকা মানুষদের বাইরে আসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে—যা যুদ্ধের পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত।
এই যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র প্রযুক্তি বা শক্তি নয়, প্রতিরোধ, কৌশল ও মনোবলই পারে আক্রমণকারীর উচ্চাভিলাষকে ভেঙে দিতে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে বিশ্ব রাজনীতিকে ভাবতে বাধ্য করছে। বড় শক্তির ছায়ায় থেকে ছোট দেশগুলোকে চেপে ধরার রাজনীতি হয়তো এখন আর আগের মতো সহজ থাকছে না। আর প্রতিরোধের শক্তি যতবার মাথা তুলে দাঁড়ায়, ততবার আগ্রাসনের ছায়া কিছুটা হলেও ম্লান হয়।