আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ভয়াবহ ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটলেও যুদ্ধপরবর্তী উত্তেজনা ও পারস্পরিক সন্দেহ যেন শেষ হচ্ছে না। যুদ্ধবিরতির ঠিক পরপরই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এক অভূতপূর্ব ঘোষণা দিয়েছে—তারা আহত ইরানি নাগরিকদের চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এই ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও কূটনৈতিক জল্পনা।
ঘোষণার ভাষা ও রহস্যজনক যোগাযোগ আহ্বান
ইসরায়েলের টাইমস অব ইসরায়েল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মোসাদ ফার্সি ভাষায় তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ঘোষণা দেয় যে, যারা সাম্প্রতিক সংঘাতে আহত হয়েছেন, তারা চাইলে মোসাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম কিংবা সিগন্যালের মতো প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সহায়তা নিতে পারেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণাটি কেবল একটি মানবিক আহ্বান নয়, বরং এটি একটি চতুর গোয়েন্দা তৎপরতার অংশ। ইরানের সমাজে বিভ্রান্তি, ভীতি এবং সরকারবিরোধী মনোভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
আড়ালে উদ্দেশ্য কী?
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ বলছেন, মোসাদ দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে নিজেদের এজেন্ট বা সহযোগী খুঁজে বের করতে বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ ও যোগাযোগ কৌশল ব্যবহার করে আসছে। আহতদের চিকিৎসা সহায়তার নামে যে গোপন বার্তাপ্রেরণ ও ‘ডিজিটাল ভিক্টিম রিক্রুটমেন্ট’ চলছে না, তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
ইরানের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা ও ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) ইতোমধ্যেই এই আহ্বানকে "গুপ্তচরমূলক প্ররোচনা" হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, মোসাদ এই মুহূর্তে ইরানের জনগণের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে এবং তাদের মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা: কে জিতল, কে হারল?
যদিও আয়াতুল্লাহ খামেনি যুদ্ধ শেষে বলেছেন, "ইরান আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে", বাস্তবতার নিরিখে দেখা যাচ্ছে—ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো চূর্ণ হয়েছে, শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত বা গৃহহীন হয়েছেন। অথচ এখন সেই দেশটির জনগণের প্রতি সহানুভূতির অভিনয় করছে তাদের চিরশত্রু।
মোসাদের লক্ষ্য: মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, এটি ইসরায়েলের একটি ‘সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’ (মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ) কৌশল। যুদ্ধের পর ধ্বস্ত ইরানি সমাজে মোসাদ এই বার্তা ছড়াতে চায়: “তোমাদের শাসকরা যতই প্রতিরোধের কথা বলুক, আমরা আছি তোমাদের পাশে।” এই মনস্তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজে বিভক্তি, সরকারবিরোধী অনুভূতি ও তথ্য ফাঁসের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
শেষ কথা: মুসলিম বিশ্ব কী বার্তা নেবে?
এই সময় মুসলিম বিশ্ববাসীর জন্য বড় প্রশ্ন হলো—এই ঘটনাগুলো কি যথেষ্ট নয় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য? যখন শত্রু রাষ্ট্র যুদ্ধ শেষে এসে মুসলমানদের ‘সাহায্যের’ নাম করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তখন আর কতটা দেরি মুসলিম নেতৃত্বের জাগরণে?
তথ্যসূত্র: Times of Israel, Anadolu, Al Jazeera, BBC Persian