
আওয়ার টাইমস নিউজ।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: হুসাইন আল আজাদ।
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ থেকে দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সংস্কার, বিচার ও পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ঐতিহাসিক ১৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে।
দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দুপুরে মহাসমাবেশের প্রধান পর্বে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই মহাসমাবেশ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৌরবোজ্জ্বল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।”
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, “গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনসমূহের ৬টি কমিশনের প্রস্তাব আমরা পর্যালোচনা করে নিজেদের মতামত দিয়েছি। ভবিষ্যৎ স্বৈরশাসন রোধ ও সুশাসনের পথে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্য আমরা এই ১৬ দফা প্রস্তাবনা দিচ্ছি।”
ইসলামী আন্দোলনের ১৬ দফা দাবি:
১. সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” পুনঃস্থাপন করতে হবে। এটি বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ভিত্তি।
২. সংসদের প্রস্তাবিত দুই কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।
৩. জুলাই ২০২৪-এ সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।
৪. ভবিষ্যতে যেন আর কোনো স্বৈরতান্ত্রিক, লুটেরা, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে না পারে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে ধ্বংস না হয়—এর জন্য দ্রুত মৌলিক রাষ্ট্রসংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।
৫. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে।
৬. পতিত ফ্যাসিবাদীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।
৭. দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুনখারাবি দমনে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
৯. ভারতের সঙ্গে করা সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে।
১০. জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের বিধান করতে হবে।
১১. চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কোনো পক্ষ বা বিদেশি চাপের কারণে যেনতেন নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।
১৩. ঘুষ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হয়রানি ও মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি রোধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলাম ও স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড রুখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৪. সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৫. আগামী জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির ঐক্য গঠন করতে হবে।
১৬. রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তি-শৃঙ্খলা এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এ সমাবেশ ঐক্যের এক শক্তিশালী বার্তা দেয় বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।