
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: নিজের বাবার মৃত্যুর খবর শুনেও কেউ এগিয়ে এল না। লাশ পড়ে রইল হাসপাতালের মর্গে। শেষে এক মানবিক সংগঠনের উদ্যোগেই দাফন সম্পন্ন হলো। এমনই এক করুণ ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি গত সোমবার সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, তার একমাত্র ছেলে চট্টগ্রামে থাকেন। খবর পৌঁছালে ছেলে লাশ গ্রহণে অনীহা জানিয়ে বলেন, “আমি লাশ নিতে পারব না।” এক পর্যায়ে তিনি নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন।
একদা মুসলিম হওয়া ইব্রাহিম, ছেলের অবহেলায় বেওয়ারিশ!
পুলিশ জানায়, মৃত্যুর পর ইব্রাহিমের কাছে পাওয়া একটি ব্যাগে দিনাজপুরের কিছু পরিচিত জনের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি একসময় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। সেখান থেকেই জানা যায়, তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কসবার এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন। সেই নারীর ঘরে একটি ছেলেও জন্ম নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই নারী আরেকজনকে বিয়ে করে নতুন সংসার গড়ে তোলেন, এবং ইব্রাহিমের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি।
ছেলের ঘৃণ্য অস্বীকৃতি, মানবিকতার দায়িত্ব নিল ‘বাতিঘর’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুর রহমান চৌধুরী বলেন, “আমরা ছেলেকে লাশ গ্রহণের অনুরোধ জানাই। কিন্তু সে সরাসরি অস্বীকৃতি জানায় এবং পরে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। এটা আমাদেরও ব্যথিত করেছে।”
শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মানবিক সংগঠন ‘বাতিঘর’-এর সদস্যরা এগিয়ে আসেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. আজহার উদ্দিন বলেন, “চার বছরে আমরা প্রায় ২০০ জন বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছি। কিন্তু এই মানুষটির ছেলে থাকার পরও তার লাশ এভাবে দাফন করতে হবে, এটা আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।”
একা চলে গেলেন ইব্রাহিম, কেউ রাখল না খবর
মঙ্গলবার বিকেলে সম্পন্ন হয় ইব্রাহিমের দাফন। সেই দাফনে পরিবারের কেউ অংশ নেয়নি। একজন মানুষ যিনি একদিন ধর্ম বদলে নতুন জীবন গড়েছিলেন, শেষ সময়ে এসে তাঁর লাশও কেউ নিতে চায়নি, এ যেন সমাজের এক ভয়াবহ আত্মকেন্দ্রিক বাস্তবতা।