
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামি জীবন ডেস্ক: সপ্তাহের সাত দিনের মাঝে এক দিন আছে, যাকে আল্লাহ তাআলা বানিয়েছেন শ্রেষ্ঠতম, সম্মানিত ও বরকতময়। এই দিনটি হলো জুমার দিন। এটি শুধু মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিনই নয়, বরং এই দিনে এমন কিছু আমল রয়েছে, যা একজন মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের মুক্তির মাধ্যম হতে পারে। তারমধ্যে অন্যতম আমল হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
জুমার দিনের এই বরকতপূর্ণ সময়ে সূরা কাহাফ পড়ার ফজিলত কেবল একটি আমল নয়, বরং এটি এক দারুণ আত্মিক শক্তি, ঈমান রক্ষার ঢাল, ও ফিতনার যুগে একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রাহমতের উপহার।
সূরা কাহাফ: একটি আলো, একটি শিক্ষা, একটি ঢাল
সূরা কাহাফ কুরআনের ১৮ নম্বর সূরা, যাতে মোট ১১০টি আয়াত আছে। এই সূরার প্রতিটি কাহিনী, প্রতিটি বাক্য একজন মুমিনকে শিক্ষা দেয় কীভাবে সে দুনিয়ার ফিতনা, মোহ, জ্ঞান ও দম্ভের মাঝে থেকেও ঈমান রক্ষা করে চলতে পারে।
এই সূরায় চারটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা আছে—
১. গুহাবাসী যুবকদের ঈমান রক্ষার কাহিনী,
২. ধনী-গরিব বাগান মালিকের অর্থের পরীক্ষা,
৩. মুসা (আ.) ও খিদর (আ.)-এর মাঝে জ্ঞান ও ধৈর্যের পাঠ,
৪. যুল-কারনাইনের ন্যায়পরায়ণ নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত।
এই চারটি গল্পে লুকিয়ে আছে আজকের আধুনিক জীবনের চারটি বড় চ্যালেঞ্জ, আকীদাহ, সম্পদ, জ্ঞান এবং ক্ষমতা। আর এই সূরাটিই সেসবের মোকাবেলায় একজন মুসলিমের জন্য এক আধ্যাত্মিক রক্ষণাবেক্ষণ।
পবিত্র হাদীসের আলোকে সূরা কাহাফ পাঠের ফজিলত
হাদীস ১:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الجُمُعَتَيْنِ
“যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত নূর ছড়িয়ে পড়ে।”
(সহীহ আল-জামে: ৬৪৭০)
ব্যাখ্যা:
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, কুরআনের এই সূরাটি পাঠ করার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার জীবনে এক সপ্তাহব্যাপী আল্লাহর পক্ষ থেকে আধ্যাত্মিক আলো ও হেদায়াতের রোশনি পায়।
হাদীস ২:
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন,
مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ
“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ রাখবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।”
(সহীহ মুসলিম: ৮০৯)
ব্যাখ্যা:
এটি বিশেষভাবে প্রমাণ করে যে এই সূরা কিয়ামতের ভয়াবহতম ফিতনা, দাজ্জালের প্রলোভন ও ধোঁকাবাজি থেকে মুমিনদের হেফাজত করতে সক্ষম।
কেন জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ?
১. কারণ এটি নবী করীম ﷺ-এর সুন্নত:
জুমার দিনে নিয়মিত এই সূরা তিলাওয়াত করার অভ্যাস ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীদের। সুতরাং আমাদেরও এটি সুন্নত হিসেবে পালন করা উচিত।
২. কারণ এটি ফিতনার সময়ের ঢাল:
সূরা কাহাফের মূল বার্তা হলো, আল্লাহর স্মরণ, তাওহিদে অবিচলতা, দুনিয়ার মোহ পরিহার, এবং আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ ভরসা। এই গুণগুলোই একজন মুমিনকে দাজ্জাল ও দুনিয়ার অন্য সব ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
৩. কারণ এটি সাপ্তাহিক আত্মশুদ্ধির উপায়:
জুমার দিনের সকাল কুরআনের আলোয় শুরু করলে মন প্রশান্ত হয়, আত্মা নির্মল হয় এবং সপ্তাহজুড়ে দীনী শক্তি বজায় থাকে।
আমলের পদ্ধতি
জুমার দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় তেলাওয়াত করা যাবে।
সম্ভব হলে অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝে পড়ুন, অথবা বিশ্বস্ত আলেমদের ব্যাখ্যা শুনুন।
প্রথম ১০ বা শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ করার চেষ্টা করুন।
আজকের যুগে আমরা যখন চারপাশে অন্ধকার ফিতনার মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলি, তখন এই সূরা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি হিদায়াতের বাতিঘর। যারা নিয়মিত জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়ে, তাদের অন্তর আল্লাহর রোশনি ও নিরাপত্তায় আচ্ছাদিত হয়। শুধু পড়লেই হবে না, এই সূরার শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ করতে পারলে আমরা প্রকৃত মু’মিন হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারব।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই বরকতময় আমলটি জুমার দিন আয়ত্তে নিয়ে জীবনে আলোর জ্যোতি ছড়িয়ে দেওয়ার তৌফিক দিন। আমীন।