আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের চারটি প্রাচীন মসজিদের অন্যতম একটি হলো কুয়াংচোও শহরের হুয়াইশাং মসজিদ। বাতিঘর মসজিদ নামেও পরিচিত এই মসজিদটি । পাশাপাশি ক্যান্টনের গ্রেট মস্ক নামেও পরিচিতি আছে এই মসজিদের। কারণ কুয়াংচোও শহরের আগের নাম হচ্ছে ক্যান্টন।
৬২৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এ মসজিদটি মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মামা সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) গড়ে তোলেন । ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই এই বন্দর নগরীতে আরব বণিকদের এক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের জন্যই এই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল।
এই মসজিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনার। এটি সমান ও লম্বা। ৩৬ মিটার উঁচু মিনারটি দেখতে অনেকটা বাতিঘরের মতো। সেখান থেকেই এর এই নামকরণ। এর উপরে কোন গম্বুজ নেই। একে প্লেইন প্যাগোডাও বলা হয়।
এই মসজিদ চীনের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ এবং সপ্তম শতকেই এটা গড়ে তোলা হয়। থাং ও সং রাজবংশের সময় এখানকার মুসলিমরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন ।পরবর্তি বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি পুনর্নিমিত হয়, সংস্কার কাজও চলে।
১৩৪৯ সালে এখানে যে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানটি ব্যবহৃত হতো তারও প্রমাণ রয়েছে। রামাদান ইবন আলাউদ্দিন নামে একজন মুসলিমের কবর এখানে রয়েছে। রামাদান ইবন আলাউদ্দিন হলেন কোরিয়ার প্রথম মুসলমান।
এই মসজিদ নির্মাণের পিছনে একটি চমৎকার গল্প রয়েছে। এই গল্প কতটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ও কতটা মিথ তা নির্ধারণ করা যায় না। এখানে বলা হয়েছে, সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা.)যখন এখানে ইসলাম প্রচার করছিলেন তখন আরব বণিকদের মধ্যে তার অনেক অনুসারী হয়। স্থানীয় মানুষও তার কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকেন। অন্যদিকে আরবদের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্মে ঈমান আনেনি তারা তার বিরোধিতা করেন। দুইপক্ষে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই সময় সাদ ইবন ওয়াক্কাস (রা.) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে অরণ্যের ভিতরে আশ্রয় নেন। তারা মাটির দেয়াল গড়েন আত্মরক্ষার জন্য। এবং একটি মসজিদ গড়ে সেখানে আশ্রয় নেন। বিরোধীরা তাদের ঘিরে ফেলে। এরমধ্যে মুসলিমদের পানীয় জল ফুরিয়ে যায়। সেই সংকটময় সময়ে অলৌকিকভাবে মাটির একস্থান থেকে পানি উঠতে থাকে। সেখানে একটি কুয়া তৈরি হয়। এই পানি পান করে মুসলিমরা নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে শত্রুদের পরাজিত করেন। সেই কুয়াটি এখনও আছে। সেখান থেকে মসজিদের ওযুর পানি ও খাবার পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে।
১৩৫০ সালে এই মসজিদের অনেক অংশ সংস্কার করে বাড়ানো হয়। ১৬৯৫ সালে আগুন লেগে মসজিদের অনেক অংশ পুড়ে গেলে আবার নির্মাণ করা হয়। বাতিঘর টাওয়ার বা মিনারটি উনবিংশ শতকে কুয়াংচোও (ক্যান্টন) শহরের প্রতীকি স্থাপনা হিসেবে গণ্য হতো। মসজিদের মূল ভবনটি চীনা হান স্থাপত্যরীতিতে গড়ে তোলা হয়েছে। ভিতরে প্রশস্ত নামাজ কক্ষ।
মসজিদটির মূল ভবন ও মিনার এখনও ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন মাটির দেয়ালের নমুনাও সংরক্ষিত আছে। এই মসজিদকে ঘিরে এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিমের বসবাস রয়েছে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর বর্ধিতকরণের খরচ দেওয়া হয়। কুয়াংচোও মেট্রোর দক্ষিণপূর্ব লাইনে সিমেনখোও স্টেশনে নামলেই এই মসজিদের মিনার চোখে পড়ে। স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বে এই মসজিদ।
সূত্রঃ সিএমজি নিউজ