
আওয়ার টাইমস নিউজ।
রহস্যময় বিশ্ব: ১৮৭২ সালের ৭ নভেম্বর, নিউ ইয়র্ক থেকে ইতালির জেনোয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আমেরিকান বাণিজ্যিক জাহাজ মেরি সেলেস্ট। জাহাজে ছিলেন ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ব্রিগস, তাঁর স্ত্রী, দুই বছরের মেয়ে এবং সাতজন ক্রু সদস্য। জাহাজটি মালামাল নিয়ে ভরা ছিল এবং যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল।
নভেম্বর মাসের শেষ দিকে, জাহাজটি এ ট্র্যাকের মধ্যে কোনো সমস্যা ছাড়াই চলছিল। তবে ৪ ডিসেম্বর, আটলান্টিক মহাসাগরের আজোর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ব্রিটিশ জাহাজ ডেই গ্রেটিয়া যখন সেখানে পৌঁছায়, তারা একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পায়। মেরি সেলেস্ট ভেসে যাচ্ছিল, কিন্তু জাহাজে কোনো মানুষ ছিল না। ক্যাপ্টেন, তার পরিবার এবং ক্রু সকলেই নিখোঁজ।
জাহাজটি তখনও চলার উপযোগী ছিল। কেবলের, যন্ত্রপাতি, ন্যাভিগেশন সরঞ্জাম সবই অক্ষত অবস্থায় ছিল। খাদ্য ও পানি যথেষ্ট পরিমাণে ছিল, জাহাজের তেলের ল্যাম্পগুলো জ্বলে ছিল। শুধু একমাত্র লাইফবোট অনুপস্থিত ছিল। এভাবে পুরো জাহাজ সম্পূর্ণ ভরা থাকা সত্ত্বেও ক্রুর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। জাহাজের লগবুকের শেষ এন্ট্রি ছিল ২৫ নভেম্বর, এবং এরপর থেকে কোনো যোগাযোগ বা ঘটনা জানা যায়নি। উদ্ধারকারীদের ধারণা ছিল, ক্রু হয়তো কোনো আকস্মিক বিপদ দেখেই জাহাজ ত্যাগ করেছে। কিন্তু কী ধরনের বিপদ, তা আজও অজানা।
এই রহস্যময় পরিস্থিতি সমুদ্রগামীদের মধ্যে ‘গোস্ট শিপ’ বা ভূতুড়ে জাহাজ হিসেবে মেরি সেলেস্টকে পরিচিতি দিয়েছে। গবেষকরা বিভিন্ন তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। কিছু গবেষক মনে করেন, ক্রুরা জাহাজ ত্যাগ করার আগে কোনো অজানা দুর্যোগ বা আতঙ্ক অনুভব করেছিল। অন্যরা ধারণা করেন যে, জাহাজের মধ্যে জমে থাকা পানি ক্রুদের আতঙ্কিত করেছিল। আবার কিছু তত্ত্বে বলা হয়, জলদস্যুদের আক্রমণ বা মানসিক অস্থিরতাই তাদের জাহাজ ত্যাগের কারণ হতে পারে।
মেরি সেলেস্টের উদ্ধারকারী, ক্যাপ্টেন ডেভিড মোরহাউজ, এই ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়েন। কিছু তত্ত্বে বলা হয়েছে, তিনি জাহাজটি উদ্ধার করার সময় জালিয়াতি করেছিলেন। যদিও এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবুও এটি রহস্যের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
জাহাজটি পরবর্তী ১৩ বছর চলাচল করেছিল। ১৮৮৫ সালে এটি ডুবিয়ে দেওয়া হয় বীমা জালিয়াতির অংশ হিসেবে। মেরি সেলেস্টের ঘটনা আজও সমুদ্রগামী ইতিহাসের অন্যতম রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, মানুষ এখনো জিজ্ঞাসু যে, সেই ক্রু কোথায় গেল এবং কেন তারা এত দ্রুত জাহাজ ছেড়ে পালিয়ে গেল।
মেরি সেলেস্টের কাহিনী শুধু ইতিহাস নয়, এটি মানুষের কৌতূহল, রহস্য এবং সাহসের গল্পও বটে। প্রতিটি যুগের পাঠক ও সমুদ্রগামীদের জন্য এটি আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
সূত্র: History.com, Smithsonian Magazine, BBC