আওয়ার টাইমস নিউজ।
আওয়ার টাইমস নিউজ স্পোর্টস বিশ্লেষণ রিপোর্টঃ
বাংলাদেশ ক্রিকেট আবারও হতাশার গল্প লিখল। দুবাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে ম্যাচটা ছিল শুধুই জয়-পরাজয়ের নয়, বরং সাত বছর পর এশিয়া কাপের ফাইনালে ফেরার সুযোগ, সেটি পরিণত হলো আত্মঘাতী ব্যাটিং ও অদূরদর্শী ম্যানেজমেন্টের এক ক্লাসিক কাহিনীতে।
প্রবাসী সমর্থকদের ভরা গ্যালারিতে, যেখানে হাজারো গলা একসাথে “বাংলাদেশ” ধ্বনি তুলছিল, সেখানে টাইগাররা যেন ব্যাট হাতে নিজেদেরই কবর খুঁড়ছিলেন। পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিংয়ের সামনে লড়াই না করে, উল্টো দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে উইকেট ছুঁড়ে দেওয়া-এটাই যেন নীতি হয়ে দাঁড়াল। অথচ লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৩৬! সেই মাঠেই যেখানে পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশ নির্ভার ভঙ্গিতে ১৬৯ তাড়া করেছিল।
ম্যানেজমেন্টের ভুল: পরিকল্পনার চরম দেউলিয়াত্ব
যেখানে প্রতিটি টুর্নামেন্টে বড় দলগুলো মিডল অর্ডারকে সবচেয়ে শক্তিশালী করে সাজায়, বাংলাদেশ সেখানে নেমেছে মাত্র একজন প্রকৃত মিডল অর্ডার ব্যাটার নিয়ে-তাওহীদ হৃদয়। এরপর যারা এসেছেন, তারা মূলত লোয়ার মিডল অর্ডারের খেলোয়াড়। শেখ মাহেদী, নুরুল হাসান সোহান, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারী—এদের কাউকেই আসল অর্থে “মিডল অর্ডার” বলা যায় না।
আরও হাস্যকর হলো, হৃদয়কে নামানো হলো প্রথম ওভারেই। যিনি মূলত ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ম্যাচ গড়ে দেওয়ার কাজ করেন, তাকে প্রথম ওভারেই পাঠিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করা হলো। এর ফলাফল কি হয়েছে, তা দেখার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
এরপর যখন স্পিনাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিলেন, তখন ব্যাট হাতে বসিয়ে রাখা হলো রিশাদ হোসেনকে-যিনি স্পিন ভাঙার জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হতে পারতেন। এর বদলে পাঠানো হলো শেখ মাহেদীকে, যিনি নতুন বলে সংগ্রামই করলেন। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত যেন ম্যানেজমেন্ট নিজেরাই বাংলাদেশের কফিনে পেরেক ঠুকে দিল।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের আত্মঘাতী মানসিকতা
ম্যানেজমেন্টের ভুলের সঙ্গে ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট নির্বাচনের মিশেলেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়। শাহীন আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরে বল টেনে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে পারভেজ ইমনের ক্যাচ, কিংবা তাওহীদ হৃদয়ের স্পিনার আসার আগেই অযথা আক্রমণ-সবই ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
শুধু সাইফ হাসানকে কিছুটা কৃতিত্ব দেওয়া যায়। তিনি চেষ্টা করছিলেন উইকেটে দাঁড়িয়ে ম্যাচকে এগিয়ে নিতে। দুটো ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলছিলেনও। কিন্তু ভাগ্য সেদিন তার পাশে ছিল না।
ক্রিকেটে সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো ধৈর্য। দাভিদ মালান একবার বলেছিলেন, “আপনি সবসময় ভাবতে পারেন ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যি হলো, ম্যাচ জেতার সুযোগ আপনার নাগালের মধ্যেই থাকে, যদি আপনি উইকেটে টিকে থাকতে পারেন।” বাংলাদেশি ব্যাটারদের এই শিক্ষা যেন কোনোদিনই মগজে ঢোকে না।
বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা এখন শুধু টেকনিক নয়, মানসিকতাতেও। ব্যাট হাতে ধৈর্যের অভাব, পরিস্থিতি বুঝে খেলার অক্ষমতা, আর ম্যানেজমেন্টের অদূরদর্শিতা-সব মিলে এমন এক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে বের হতে হলে শুধু স্কিল নয়, চাই ক্রিকেটবোধের উন্নতি।
শেষ পাঁচ ওভারে যখন দরকার ছিল মাত্র ৫১ রান, তখনও ম্যাচ হাতের বাইরে চলে গেল। অথচ টি-টোয়েন্টিতে এ রান তুলতে হলে কেবল দুইটা বড় ওভারই যথেষ্ট। কিন্তু সেই সামর্থ্য, সেই বিশ্বাসটাই যেন টাইগারদের নেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে হারের পর আত্মসমালোচনার অভাব নেই। কোচ ফিল সিমন্স ম্যাচ শেষে বলেছেন, “আমরা ভালো সিদ্ধান্ত নেইনি, শট নির্বাচনও খারাপ ছিল।” কিন্তু প্রশ্ন হলো-এই আত্মোপলব্ধি কি কেবল কাগজেই থাকবে, নাকি সত্যিই কোনো দিন বাস্তবায়িত হবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ এখন আর পাকিস্তান বা ভারত নয়, বরং নিজেদেরই অপরিণত মানসিকতা আর কাণ্ডজ্ঞানহীন টিম ম্যানেজমেন্ট।
-