আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলাম ডেস্কঃ কেন ও কিভাবে সৃষ্টিকর্তা একজন এবং কেন এর বেশি হওয়া সম্ভবও না? কেন তাওহিদ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। কেন মহান রব আল্লাহ্٫ শুধু এই কালিমার জন্য কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, আর কাউকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন?
অনেক সময় আমরা মুসলিম হয়েও এই মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি না জানার চেষ্টাও করিনা। নিজেরা এই কারণটি আয়ত্ত করতে পারি না এবং অন্যকেও এর সঠিক ব্যাখ্যাও বলতে পারি না। খুব সহজ ভাষায় একে ব্যাখ্যা করার জন্য একটা ছোট্ট গল্প আপনার নিকট উপস্থাপন করছি।
ইউসুফ চাকরির উদেশ্যে একটা বাসায় উঠলেন৷ বাসাটা ছোট সুন্দর ও এক রুমের সাথে বাথরুম ও বারান্দা আছে, বড় একটা জানালা আর জানালার পাশে খোলোমেলা পরিবেশ অনেক গাছপালা ছিল। বাসায় উঠার পর তিনি বেশ খুশিই ছিলেন। কারণ তিনি ভাবলেন এতো সুন্দর একটা একরুমের এই বাসা কম ভাড়ায় পেয়ে গেয়ে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন।
প্রথমে বেশ ভালোই লাগছিল, এতো বড় রুম। এতো আলো। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ৷ কিন্তু এই ভালোলাগা তার বেশি দিন টিকলো না। যে প্রাকৃতিক পরিবেশের আনন্দে তিনি বিভোর ছিলেন তা-ই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ালো। প্রথমে যে সমস্যাটা হলো, তাহলো অনেক রংবেরঙের পোকামাকড় রাতের লাইটের আলোর আকর্ষনে চলে আসা শুরু করলো ঘরের ভেতর। রাতে জানালা খুললে লাইট জ্বালানো যেতো না। তারপর দেখা গেল মৌমাছির আক্রমন৷ পাশের একটা গাছে মৌচাক ছিল। মাঝেমাঝে সেখান থেকে মৌমাছি এসে হুল ফুটিয়ে দিতো ইউসুফের গায়ে।
এরপর বর্ষায় শুরু হলো পিঁপড়া জাতির আক্রমণ। খাবার, বইপত্র এমনকি পানিতেও পিঁপড়াদের দখল। দেয়ালের ছোট্ট বড় ফাটল গুলোতে হলো পোঁকা মাকড়ের বসতি। এভাবে একের পর এক পোকামাকড় থেকে শুরু করে ইদুর এমনকি বিড়ালের উৎপাতে যখন ইউসুফ দিনে দিনে অতিষ্ট হয়ে উঠলো । এরকম চলতে থাকলো বেশ কয়েক মাস। কেরোসিন, ফিনিশ আর ব্লিচিং নিয়ে ইউসুফের রীতিমতন দৌড়াদৌড়ি। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত বেচারাকে বাসায় এসে এক বিরাট যুদ্ধ করতে হয়৷ এমনি একদিন সে একাকী মনে মনে ভাবে এই ছোট্ট একটা ঘর, ছোট্ট একটা রুম এতটুকু জায়গার উপরও সে ঠিকমতন কর্তৃত্ব করতে পারছে না। মানুষ কত অসহায় আর কত দুর্বল।
এবার গল্পটা একটু ভিন্ন ভাবে পর্যালোচনা করা যাক। যেকোন স্পেস বা জায়গাতে অস্তিত্বের আগমন ঘটবেই। তা যত ছোটই হোক না কেন এবং তা পৃথিবীর ও নভোমণ্ডলের যেকোনো জায়গাই হোক না কেন। জায়গা যত ছোটই হোক আশেপাশের নানা জীব-জন্তু জীবাণু ইত্যাদি নানা অস্তিত্বের আগমন ঘটবেই। বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি কোনো স্থানই খালি নয়। যেখানে বায়ু পর্যন্ত নেই, সেই মহাশুন্যেও আছে অজস্র ধূলিকণা, কসমিক’ রে।
এখানে অস্তিত্ব শব্দটা কেন আসলো ? যেটা বাস্তবে আছে তারই তো অস্তিত্ব থাকে তাই না?
এখন এই যে আমাদের পৃথিবী ও এর সৌরজগত এবং আরও যত গ্যালাক্সি আছে, সেগুলোতে যত যত গ্রহ আছে। কত কত স্পেস আছে যেগুলো আমরা হয়তো জানিও না। এতো জায়গা, এতো সম্পদ এগুলো যদি আলাদা আলাদা সৃষ্টি কর্তার হতো, তাহলে তারা নিজেরা কি একজন আরেক জনের জায়গায় চলে আসতে চাইতেন না? একজন সৃষ্টিকর্তা অপরের জায়গা দখল করার চেষ্টা করতেন না? সামান্য একটা ছোট এই পৃথিবীতে মানুষ নামের প্রাণী যুদ্ধ করছে অন্য প্রানীদের সাথে। তাহলে কি এতো এতো বিশাল নভোমণ্ডল, তারা, গ্রহ,উপগ্রহ,নক্ষত্র এগুলো নিয়ে সৃষ্টিকর্তারা নিজেদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতেন না?
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে, ২১ ন ১ সুরার ২২ ন ১ আয়াতে বলেন,
“আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকতো, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। ”
অর্থাৎ একের অধিক সৃষ্টিকর্তা থাকলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত৷ এখানে কেন ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে? কারণ কোনো দেশে যুদ্ধ লাগলে, যুদ্ধ শেষে সেই দেশ প্রায় ধ্বংস ও বিধ্বস্ত হয়ে যায়৷ তাহলে নভোমন্ডলে যদি সৃষ্টিকর্তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেন ও দখলদারিতে ব্যস্ত থাকতেন তখন সব কি ঠিক থাকতে পারতো ? তখন এই ভারসাম্য বজায় রেখে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পারতো। প্রতিদিন প্রভাতে আলোচ্ছটা আর বিকালে গোধূলি আমরা দেখতে পেতাম?
কুরআনে এই বাস্তবিক এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়কে কত সহজ ভাষায় আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা বর্ননা করেছেন।
এজন্য আমরা মুসলিমরা এবং খ্রিষ্টান, ইহুদী, শিখ, বাহাই, জৈন ইত্যাদি ধর্মের মানুষ। এবং পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি সংখ্যক মানুষ এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। প্রত্যেক ধর্মগ্রুন্থেই এ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে বর্ননা করা আছে৷
লেখকঃ ডা. মেহ্জুবা আহমেদ।
বিডিএস, এসওএমসি।