আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের মধ্যে মোবাইল চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক এই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পৈচাশিক কায়দায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এদের মধ্যে ৩ জন ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। এবং অন্য ২ জন হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল বলে হল সূত্রে জানা গিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জালাল মিয়া ফজলুল হল শাখা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারি ছিলেন।
আল হোসাইন সাজ্জাদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। হল সূত্রে জানা গিয়েছে,সাজ্জাদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন।
আহসান উল্লাহ্ ছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপসম্পাদক। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে বেশ পরিচিত ছিলেন।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সক্রিয় অনুসারী ছিল ওয়াজিবুল আলম ও মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, সুমন মিয়া ও ওয়াজিবুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের একান্ত অনুগত ও সক্রিয় কর্মী হিসেবে হলে কাজ করেছেন। ৫ আগস্টের আগে তারা উভয়েই ব্যাচমেট ও জুনিয়রদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন।
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন ছাত্রলীগের পদ ছিল এমন তথ্য রয়েছে। বিস্তারিত তদন্তে সব তথ্য উঠে আসবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম- তোফাজ্জল বলে জানায়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পরে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যানটিনে নিয়ে খাবার খাইয়ে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনে গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পিছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠিদ্বারা উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে।
পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানালে তাদের সহায়তায় অচেতন যুবককে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম সাত সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সূত্রঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস)