
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলাম ডেস্ক: ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী,একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও কুরআনের নির্দেশনা রয়েছে, যা একটি সুখী ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একজন আদর্শ স্বামীকে তার স্ত্রী এবং পরিবারের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করতে হয়, তার প্রধান কিছু দিক নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. স্নেহ ও ভালবাসা প্রদর্শন:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,
আর তার নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রূম: ২১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে স্নেহ ও ভালবাসা করা। একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীকে সম্মান করবে এবং তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করবে।
২.পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব পালন:
স্বামীর অন্যতম প্রধান কর্তব্য হলো পরিবারের জন্য আর্থিক দায়িত্ব পালন করা। কুরআনে বলা হয়েছে:
“পুরুষেরা নারীদের রক্ষণাবেক্ষণ, কারণ আল্লাহ একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তাদের সম্পদ ব্যয় করেছে।” (সূরা নিসা, ৩৪)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মেটানোর জন্য দায়িত্বশীল।
৩.ন্যায়বিচার:
স্বামীর প্রধান দায়িত্বগুলো মধ্যে অন্যতম একটি দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীর প্রতি ন্যায়বিচার করা এবং তাকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি, ৩২৬)
এই হাদিস দ্বারা এটাই নির্দেশ করে যে, একজন আদর্শ স্বামী কখনোই স্ত্রীর প্রতি অন্যায় আচরণ করবে না এবং তাকে সম্মান ও ভালোবাসা প্রদান করবে।
৪. শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির উৎসাহ দেওয়া:
স্বামীকে স্ত্রীর শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মহানবী (সা.) এর জীবনে দেখা যায় যে তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতেন এবং তাদের আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করতেন।
৫. শান্তি ও সুখ নিশ্চিত করা:
স্বামীকে তার স্ত্রীকে মানসিক শান্তি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। মহানবী (সা.) স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন এবং তাদের প্রতি যত্নবান ছিলেন।
৬. সুন্দর ব্যবহার ও দয়া প্রদর্শন:
আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীর সাথে অবশ্যই সুন্দর ব্যবহার করবে এবং ধৈর্যশীল হবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন:
“মোমিনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র সর্বোত্তম।” (সহীহ মুসলিম)
৭. পরস্পরের অধিকার রক্ষা করা:
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অধিকার রক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষক এবং প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের জন্য রক্ষক এবং তাকে তার পরিবার সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” (সহীহ বোখারি)
উপসংহার:
একজন আদর্শ স্বামী ইসলামের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে এবং তার স্ত্রীর প্রতি দয়া, স্নেহ, ন্যায়বিচার ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে। পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসা একটি বৈবাহিক জীবনের মূল ভিত্তি, যা পরিবারে শান্তি এবং সুখ নিশ্চিত করে।