আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সিরিয়া নিয়ে তুরস্কের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা একটি “শত্রুতাপূর্ণ দখল” ছিল, যা তুরস্ক সফলভাবে কম ক্ষতির মধ্যে সম্পন্ন করেছে। তবে ফিদান এই মন্তব্যে সঠিকতা খুঁজে পাননি এবং তা নাকচ করে দিয়েছেন। তার মতে, সিরিয়ায় বর্তমানে যা ঘটছে তা কোনভাবেই তুরস্কের দখল নয়, বরং এটি সিরিয়ার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছার ফলস্বরূপ।
ফিদান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি কোন ধরনের দখল নয়। যদি কোনো দখল হয়, তবে সেটা হচ্ছে সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছার দখল। তুরস্ক কখনও চায় না যে এটি সিরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে পরিচিত হোক। আমরা ইতিহাস থেকে অনেক বড় পাঠ নিয়েছি, যেখানে আধিপত্যের সংস্কৃতি আমাদের অঞ্চলে শুধু ধ্বংসই ডেকে এনেছে। তাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল সহযোগিতা, আধিপত্য নয়।
তিনি আরো যোগ করেন, “আমরা কখনোই সিরিয়ার শাসক হতে চাই না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই অঞ্চলে সহযোগিতাই আসল শক্তি। তুরস্ক, ইরান, বা আরবদের কোনটিই এখানে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না, বরং সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফিদান তুরস্কের কৌশল স্পষ্ট করেছেন, যেখানে তাদের লক্ষ্য হলো সিরিয়ার নতুন সরকারকে সহায়তা করা এবং কোনো ধরনের একক আধিপত্যের পথে না গিয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠা করা।
ফিদান সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী YPG-কে তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, YPG আসলে PKK (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি)-এর শাখা এবং এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যদিও YPG নিজেদের আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে পশ্চিমাদের সহযোগিতা দাবি করে, ফিদান বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলো এই সত্যটা দেখছে না যে, YPG আসলে PKK-র একটি অংশ। আমাদের পশ্চিমা মিত্ররা এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।” তুরস্ক বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে যে, তারা সিরিয়ার গণতান্ত্রিক বাহিনী (SDF) এবং YPG-এর প্রতি তাদের সামরিক সহায়তা বন্ধ করুক।
তিনি সিরিয়ার নতুন সরকারকে একটি বৈধ অংশীদার হিসেবে মেনে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। ফিদান বলেন, “আমরা সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে একটি বৈধ সরকার হিসেবে জানি, আর তাই তুরস্ক দামেস্কে তার দূতাবাস পুনরায় খুলেছে।” তুরস্কের দূতাবাসের মাধ্যমে সিরিয়ার স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।
ফিদান আরও জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটা সময় এসেছে, বিশেষ করে জাতিসংঘের উচিত, হায়াত তাহরীর আল-শাম (HTS)-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।” HTS-র নেতা আহমেদ আল-শারা, যিনি আবু মুহাম্মদ আল-জুলানি নামে পরিচিত, ২০১৬ সাল থেকে আল-কায়দার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজেকে সিরিয়ার পরবর্তী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।
এই সব বিবৃতি দিয়ে, তুরস্ক সিরিয়ার পরবর্তী পরিস্থিতে ভূমিকা পালনে দৃঢ় এবং কৌশলী অবস্থান নিয়েছে, যেখানে তারা সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে সমর্থন করে, তবে তার সাথে সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী।