আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের জনগণ যখন বড়দিনের উৎসব উদযাপনে প্রস্তুত, তখনই রাশিয়ার বর্বর হামলায় দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, সকালে রাশিয়ার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন এবং বিস্তৃত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী একাধিক স্থানে একযোগে হামলা চালিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ছয়জন গুরুতর আহত হন। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ জানিয়েছেন, আবাসিক এলাকাগুলোতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
ডিনিপ্রো অঞ্চলেও রাশিয়ার হামলা লক্ষ্যণীয় ছিল। আঞ্চলিক গভর্নর সের্হি লিসাক জানান, রুশ বাহিনী সেখানে জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়েছে। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ডিটিইকের মতে, তাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রী জার্মান গালুশচেঙ্কো জানিয়েছেন, ধারাবাহিক এই হামলা দেশের জ্বালানি খাতকে বিপর্যস্ত করেছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছরের মধ্যে এটি ছিল ডিটিইকের অবকাঠামোতে ১০ম হামলা।
রাশিয়ার এই ধারাবাহিক আঘাতে ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দেশজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে, যা শীতকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এর আগেও ১৭ নভেম্বর রাশিয়া ইউক্রেনে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৯০টি ড্রোন হামলা চালায়। ওই হামলায় সাতজন নিহত হন এবং বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর ফলে টানা আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলে।
রোববার ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার কাজান শহরে ড্রোন হামলা চালায় কিয়েভ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আরও ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই প্রতিশোধ হিসেবে বড়দিনের সকালে এই হামলা চালানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের প্রভাব ও বিদ্যুৎ সংকট ইউক্রেনের জনগণের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। বড়দিনের মতো একটি আনন্দের দিনে এই হামলা তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শীতকালীন এই সময়ে বিদ্যুৎ ও গরম পানির অভাবে হাজার হাজার মানুষ চরম কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ কেবল দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর এই আক্রমণ ইউক্রেনের অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, যাতে সাধারণ মানুষ আরও বিপর্যয়ের শিকার না হন।