আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি ঢাকা সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। আগুনের ফলে ভবনের ছয় তলা থেকে নয় তলা পর্যন্ত সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুটেজ এবং ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার (ডিভিআর) পুড়ে যায়, যার ফলে ভবনটির নিরাপত্তা তথ্য নিখোঁজ হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের দুই দিন পরেও আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি, এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
তদন্ত কমিটি ও সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন যে, ৩০ ঘণ্টা ধরে কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও একই সময়ে তিনটি স্থানে আগুন লাগা রহস্যজনক। এ ছাড়া, সাত নম্বর ভবনের আটতলায় আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি কুকুরের মরদেহও পাওয়া গেছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। কুকুরটি কীভাবে ওই ভবনে পৌঁছালো এবং তার শরীরে কোনও বিষাক্ত পদার্থ ছিল কিনা, তা জানার জন্য ফরেনসিক বিভাগ পরীক্ষা করছে।
এদিকে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মেগা প্রকল্পের ফাইল তলব করার পর এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হতে পারে, যাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষত, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ফাইল তলব করার পর এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বিশ্বাস করে, সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত শক্তিশালী যে, তৃতীয় পক্ষের কাজ করা কঠিন হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডের পর, সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচিবালয়ে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কারণে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটেছে, যেমন–বিভিন্ন সংগঠন বা পক্ষগুলোর অননুমোদিত প্রবেশ এবং মিছিল করা। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই সচিবালয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা কড়া পাহারা বসান। তদন্ত কমিটি, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে কাজ করছে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছে এবং তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কমিটি নিশ্চিত করেছে যে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনের কারণ সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়। সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে এবং ভবনের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, কুকুরের মরদেহ এবং তার ভবনে উঠার পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, যদি কোনো বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুরকে ভবনের ভিতরে পাঠানো হয়ে থাকে, তবে সে শুধুমাত্র সুরক্ষিত নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করতে সক্ষম হতে পারে।
এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। উচ্চতর তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, তদন্ত চলমান রয়েছে এবং তারা আগুনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান করছেন।